প্রশ্ন : পানিপথের প্রথম যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে ও কাদের মধ্যে হয়েছিল? এই যুদ্ধে বাবরের জয়লাভের কারণ কী?
উত্তর: পনিপথের প্রথম যুদ্ধ (১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ)
পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দের ২১শে এপ্রিল সংঘটিত হয়েছিল মুঘল সম্রাট বাবর এবং দিল্লির লোদী রাজবংশের শেষ সুলতান ইব্রাহিম লোদী-র মধ্যে। এই যুদ্ধে বাবরের জয়লাভের পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল।
* উন্নত সামরিক কৌশল:
* তুলুগমা কৌশল: বাবর মধ্য এশিয়ার "তুলুগমা" কৌশল ব্যবহার করেন, যেখানে শত্রুকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলা হতো।
* আরাবা/রুমি কৌশল: কামান ও বন্দুকধারী সৈন্যদের সুরক্ষার জন্য গরুর গাড়ি বা কাঠের ব্যারিকেড (আরাবা) ব্যবহার করা হয়, যা কামানের কার্যকারিতা বাড়ায়।
* কামানের ব্যবহার: বাবর ভারতে প্রথমবার কামানের ব্যাপক ব্যবহার করেন। কামানের শব্দ ও ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা লোদী বাহিনীর হাতিদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
* দক্ষ অশ্বারোহী বাহিনী: বাবরের অশ্বারোহী বাহিনী ছিল অত্যন্ত দ্রুতগামী ও সুপ্রশিক্ষিত।
* বাবরের নেতৃত্ব: বাবর ছিলেন একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ সেনাপতি, যিনি কঠিন পরিস্থিতিতেও সৈন্যদের অনুপ্রাণিত করতেন।
* ইব্রাহিম লোদীর দুর্বলতা: ইব্রাহিম লোদীর সেনাবাহিনী ছিল পুরনো ধাঁচের, এবং তাঁর অহংকারী নেতৃত্ব ও সভাসদদের অনাস্থা তাঁর পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল।
এই যুদ্ধের ফলে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপিত হয়।
বা,
উত্তর: পানিপথের প্রথম যুদ্ধ:
* সময়কাল: ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দের ২১শে এপ্রিল।
* কাদের মধ্যে: এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর এবং দিল্লির লোদী রাজবংশের শেষ সুলতান ইব্রাহিম লোদী-র মধ্যে।
এই যুদ্ধে বাবরের জয়লাভের কারণ:
পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবরের জয়লাভের পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল, যা ইব্রাহিম লোদীর বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করতে সহায়তা করেছিল।
১. উন্নত সামরিক কৌশল ও রণনীতি:
* তুলুগমা কৌশল: বাবর মধ্য এশিয়া থেকে "তুলুগমা" নামক এক বিশেষ সামরিক কৌশল নিয়ে এসেছিলেন। এই কৌশলে সেনাবাহিনীকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে শত্রুকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে আক্রমণ করা হতো। এটি ইব্রাহিম লোদীর অপ্রস্তুত এবং সনাতন পদ্ধতির সৈন্যদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছিল।
* আরাবা পদ্ধতি (রুমি কৌশল): বাবর উসমানীয় তুর্কিদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে "আরাবা" বা "রুমি কৌশল" ব্যবহার করেন। এতে কামান ও বন্দুকধারী সৈন্যদের জন্য গরুর গাড়ি বা কাঠ দিয়ে সুরক্ষিত ব্যারিকেড তৈরি করা হতো, যার পেছনে কামান স্থাপন করা হতো। এটি কামানের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করত এবং পদাতিক সৈন্যদের সুরক্ষা দিত।
২. কামানের ব্যবহার:
* বাবর ভারতে প্রথম কামান ও বন্দুকের ব্যাপক ব্যবহার করেন। ইব্রাহিম লোদীর সেনাবাহিনীতে কামান ছিল না। কামানের বিকট শব্দ এবং ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা লোদী বাহিনীর হাতিদের ভীত করে তোলে, যার ফলে হাতিগুলো নিজেদের সৈন্যদের উপর দিয়েই চলে যায় এবং লোদী বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
৩. দক্ষ অশ্বারোহী বাহিনী:
* বাবরের অশ্বারোহী বাহিনী ছিল অত্যন্ত দ্রুতগামী ও সুপ্রশিক্ষিত। তারা দ্রুতগতিতে শত্রুপক্ষের দুর্বল অংশে আঘাত হানতে পারতো।
৪. বাবরের ব্যক্তিগত নেতৃত্ব ও দক্ষতা:
* বাবর নিজে একজন অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও দক্ষ সেনাপতি ছিলেন। তিনি কঠিন পরিস্থিতিতেও দৃঢ়তা বজায় রাখতেন এবং তাঁর সৈন্যদের অনুপ্রাণিত করতেন। তাঁর সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন জয়ের অন্যতম কারণ ছিল।
৫. ইব্রাহিম লোদীর দুর্বলতা:
* সেনাবাহিনীর দুর্বলতা: ইব্রাহিম লোদীর সেনাবাহিনী সংখ্যায় বড় হলেও তারা ছিল পুরনো ধাঁচের এবং অনুগত ছিল না। তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল।
* নেতৃত্বের অভাব: ইব্রাহিম লোদী ছিলেন একজন অহংকারী ও অনভিজ্ঞ শাসক। তাঁর অনেক সভাসদ ও আফগান সর্দার তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল এবং তাঁকে সমর্থন করেনি। এমনকি কিছু স্থানীয় শাসক বাবরকে ভারতে আক্রমণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।
এই কারণগুলোর সম্মিলিত প্রভাবে বাবর পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভ করেন এবং এর মাধ্যমে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপিত হয়।