সপ্তম শ্রেণী
ভূগোল
দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন
প্রশ্নের মান ৫ নং
১. নীল নদের গতিপথের বিবরণ দাও।
নীল নদ পৃথিবীর দীর্ঘতম নদ, যা আফ্রিকা মহাদেশের ১১টি দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর প্রধান দুটি শাখা হলো শ্বেত নীল নদ ও ব্লু নীল নদ। শ্বেত নীল নদ বুরুন্ডির রুভিরা নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে ভিক্টোরিয়া হ্রদ অতিক্রম করে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়। ব্লু নীল নদ ইথিওপিয়ার তানা হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে সুদানের খার্তুমে শ্বেত নীলের সাথে মিলিত হয়ে মূল নীল নদের সৃষ্টি করে। এরপর এটি উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে মিশরের ওপর দিয়ে ভূমধ্যসাগরে পতিত হয়। নীল নদের অববাহিকা বিশাল এবং এটি কৃষি, পরিবহন ও সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২. সাহারার জলবায়ুর পরিচয় দাও।
সাহারার জলবায়ু চরম প্রকৃতির, যা পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক ও উষ্ণতম মরুভূমি। এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম, বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২৫০ মিমি-এর নিচে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৫০° সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায় এবং শীতকালে রাতের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যেতে পারে। দিনের বেলায় মাটি দ্রুত উত্তপ্ত হয় এবং রাতে দ্রুত তাপ হারায়, ফলে তাপমাত্রার বিশাল পার্থক্য দেখা যায়। আকাশ প্রায়শই মেঘমুক্ত থাকে, যার কারণে সৌর বিকিরণ বেশি হয়। শুষ্ক বাতাস এবং উচ্চ বাষ্পীভবন হার এই অঞ্চলের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
৩. প্লাবনভূমি ও অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ কিভাবে সৃষ্টি হয় তা চিত্রসহ লেখ।
প্লাবনভূমি: নদীর মধ্য ও নিম্ন গতিতে ভূমির ঢাল কম হওয়ায় নদীর স্রোত হ্রাস পায়। বর্ষাকালে নদীতে জলের পরিমাণ বাড়লে নদীর দু'কুল ছাপিয়ে জল চারপাশের নিচু জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্লাবিত অঞ্চলের পলি, কাদা, বালি ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে যে সমতল ভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে প্লাবনভূমি বলে।
অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ: নদীর নিম্নগতিতে বা সমভূমি অঞ্চলে নদী খুব আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হয়, যাকে মিয়েন্ডার বলে। মিয়েন্ডারের বাঁকের বাইরের দিকে ক্ষয় এবং ভেতরের দিকে সঞ্চয় হয়। সময়ের সাথে সাথে ক্ষয়ের কারণে বাঁকগুলি আরও সংকীর্ণ হয়ে আসে এবং একসময় নদীর মূল স্রোত বাঁকটি পুরোপুরি কেটে সোজা পথে প্রবাহিত হতে শুরু করে। ফলে মূল নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অর্ধচন্দ্রাকার বা ঘোড়ার খুরের মতো যে হ্রদের সৃষ্টি হয়, তাকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে।
৪. নদীর উচ্চগতি মধ্যগতি ও নিম্নগতির সঙ্গে মূলত ক্ষয়, পরিবহন ও সঞ্চয় কাজ যথাক্রমে প্রাধান্য পায় কেন উল্লেখ কর।
নদীর উচ্চগতিতে ক্ষয়: উচ্চগতিতে ভূমির ঢাল বেশি হওয়ায় নদীর স্রোত অত্যন্ত তীব্র হয়। এই অংশে নদী অবঘর্ষণ, ঘর্ষণ, দ্রবণ ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় দ্রুত ভূমি ক্ষয় করে, ফলে গিরিখাত, ক্যানিয়ন, জলপ্রপাত ইত্যাদি সৃষ্টি হয়।
নদীর মধ্যগতিতে পরিবহন: মধ্যগতিতে ভূমির ঢাল কিছুটা কমে আসে, ফলে নদীর স্রোত উচ্চগতির চেয়ে কম হয়। এই অংশে নদী ক্ষয় করা পদার্থগুলিকে বহন করে নিয়ে যায় এবং কিছু পলি বা বালি সঞ্চয়ও করে। মিয়েন্ডার ও প্লাবনভূমি এই অংশের বৈশিষ্ট্য।
নদীর নিম্নগতিতে সঞ্চয়: নিম্নগতিতে ভূমির ঢাল প্রায় সমতল হয়, ফলে নদীর স্রোত অনেক কমে যায়। এই অংশে নদী তার বহন ক্ষমতা হারায় এবং নুড়ি, বালি, কাদা ইত্যাদি জমা করে। এর ফলে বদ্বীপ, প্লাবনভূমি, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ ইত্যাদি সঞ্চয়জাত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
৫. চিত্রসহকারে স্তুপ পর্বত ও আগ্নেয় পর্বত সম্পর্কে আলোচনা কর।
স্তুপ পর্বত: ভূ-আলোড়নের ফলে যখন ভূপৃষ্ঠে ফাটল বা চ্যুতির সৃষ্টি হয় এবং এই ফাটলের দু'পাশের অংশ নিচে বসে গেলে মধ্যবর্তী অংশ উপরে উঠে স্তুপ পর্বতের সৃষ্টি হয়। অথবা মধ্যবর্তী অংশ নিচে বসে গেলে পাশের অংশ উপরে উঠে স্তুপ পর্বতের সৃষ্টি হতে পারে। এর ঢাল সাধারণত খাড়া হয়। উদাহরণ: ভারতের সাতপুরা পর্বত, জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট।
আগ্নেয় পর্বত: ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা ফাটল বা দুর্বল অংশ দিয়ে ভূপৃষ্ঠে উঠে এসে লাভা, ছাই, গ্যাস ইত্যাদি রূপে সঞ্চিত হয়ে যে মোচাকৃতি পর্বতের সৃষ্টি হয়, তাকে আগ্নেয় পর্বত বলে। এর চূড়ায় জ্বালামুখ দেখা যায়। উদাহরণ: ইতালির ভিসুভিয়াস, জাপানের ফুজিয়ামা।
৬. নদীর নিম্ন গতিতে সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ চিত্রসহ বর্ণনা কর।
নদীর নিম্ন গতিতে ভূমির ঢাল অত্যন্ত কম থাকায় নদীর স্রোত প্রায় থাকে না বললেই চলে। এই কারণে নদী তার বহন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং পলি, বালি, কাদা ইত্যাদি নদীবক্ষে ও নদী উপত্যকায় জমা করতে শুরু করে। এই সঞ্চয় কার্যের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।
প্লাবনভূমি: বর্ষাকালে নদী দু'কূল ছাপিয়ে গেলে জলের সাথে আসা পলি দু'ধারে জমা হয়ে যে সমতল ভূমি তৈরি করে, তাকে প্লাবনভূমি বলে। এই ভূমি কৃষিকাজের জন্য উর্বর হয়।
স্বাভাবিক বাঁধ: প্লাবনভূমির কিনারায় নদীর পলি ও বালি জমা হয়ে যে উঁচু বাঁধের মতো ভূমিরূপ তৈরি হয়, তাকে স্বাভাবিক বাঁধ বলে।
অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ: নদীর বাঁকগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘোড়ার খুরের মতো যে হ্রদ সৃষ্টি হয়, তাকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে (যেমনটি উপরে বর্ণিত হয়েছে)।
বদ্বীপ: নদী মোহনার কাছে সমুদ্রে পতিত হওয়ার আগে তার পলি, বালি, কাদা সঞ্চয় করে ত্রিকোণাকার বা পাখার মতো যে ভূমিরূপ তৈরি করে, তাকে বদ্বীপ বলে। উদাহরণ: গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের বদ্বীপ।
৭. আফ্রিকা মহাদেশে জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের বৈচিত্র্যের কারণ লেখ।
আফ্রিকা মহাদেশে জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের বৈচিত্র্যের প্রধান কারণগুলো হলো:
* বিশাল ভৌগোলিক বিস্তার: আফ্রিকা মহাদেশ নিরক্ষরেখার উভয় দিকে বিস্তৃত, ফলে বিভিন্ন অক্ষাংশে বিভিন্ন সৌর বিকিরণ প্রাপ্তি ঘটে, যা জলবায়ু বৈচিত্র্যের প্রধান কারণ।
* উচ্চতা: মহাদেশের বিভিন্ন অংশে মালভূমি ও পার্বত্য অঞ্চল থাকায় উচ্চতার পার্থক্যের কারণেও জলবায়ুর ভিন্নতা দেখা যায়। উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা কমে যায়।
* সমুদ্র থেকে দূরত্ব: সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত অঞ্চলগুলিতে (যেমন সাহারা মরুভূমি) চরমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায়, যেখানে তাপমাত্রা বেশি ও বৃষ্টিপাত কম। উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রের প্রভাব থাকায় জলবায়ু মৃদু হয়।
* মৌসুমি বায়ু: মহাদেশের কিছু অংশে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঋতুভিত্তিক বৃষ্টিপাত হয়, যা সাভানা তৃণভূমি সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
* বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল: কিছু পার্বত্য অঞ্চল বৃষ্টির ছায়ায় পড়ে শুষ্ক অঞ্চলে পরিণত হয়।
এই জলবায়ুগত বৈচিত্র্যের ফলেই নিরক্ষীয় অঞ্চলের চিরহরিৎ বনভূমি থেকে শুরু করে উষ্ণ মরুভূমির ক্যাকটাস এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায়।
৮. আফ্রিকা মহাদেশের নিরক্ষীয় ও ভূমধ্যসাগরের সন্নিহিত অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ কিভাবে জলবায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তা ব্যাখ্যা করো।
নিরক্ষীয় অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ: নিরক্ষরেখার কাছাকাছি অঞ্চলে সারা বছর উচ্চ তাপমাত্রা (গড় ২৭° সেলসিয়াস) এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত (২০০-২৫০ সেমি) হয়। এই উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু চিরহরিৎ ঘন অরণ্যের জন্ম দিয়েছে। এখানকার গাছপালা খুব লম্বা হয় এবং পাতা চওড়া হয়, যা সালোকসংশ্লেষণে সাহায্য করে। এই অরণ্যগুলি একাধিক স্তরে বিন্যস্ত থাকে এবং এখানে প্রচুর পরিমাণে লতাগুল্ম, পরগাছা এবং বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু দেখা যায়। আমাজন ও কঙ্গো নদীর অববাহিকা এই ধরণের উদ্ভিদে পূর্ণ।
ভূমধ্যসাগরের সন্নিহিত অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ: ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল উষ্ণ ও শুষ্ক এবং শীতকাল মৃদু ও আর্দ্র হয়। এই বিশেষ জলবায়ুর সাথে মানিয়ে চলার জন্য এখানকার গাছপালা বিশেষ বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে। এখানে সাধারণত চিরহরিৎ গুল্ম, ওক, কর্ক ওক, জলপাই, লরেল ইত্যাদি গাছ দেখা যায়। পাতাগুলো মোম জাতীয় আস্তরণযুক্ত, ছোট ও চামড়ার মতো হয়, যা জলক্ষয় রোধ করে। এখানকার ফলগাছ যেমন লেবু, কমলা, আঙুর ইত্যাদি গ্রীষ্মের শুষ্কতা সহ্য করতে পারে।
৯. মানব জীবনে পর্বতের প্রভাব আলোচনা কর।
মানব জীবনে পর্বতের প্রভাব অপরিসীম:
* জল ও বিদ্যুতের উৎস: পর্বতগুলি নদীর উৎসস্থল। পর্বত থেকে বরফ গলা জল বা বৃষ্টির জল থেকে সৃষ্ট নদীগুলি পানীয় জল, সেচ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
* খনিজ সম্পদ: পর্বতে বিভিন্ন মূল্যবান খনিজ পদার্থ (যেমন কয়লা, লোহা, তামা) পাওয়া যায়, যা শিল্পের বিকাশে সহায়ক।
* পর্যটন: পর্বতের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙা করে। ট্রেকিং, স্কিইং, পর্বতারোহণ ইত্যাদি পর্যটন কার্যকলাপ জনপ্রিয়।
* জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ: পর্বতমালা বায়ুপ্রবাহের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে এবং বৃষ্টিপাতের ধরনকে প্রভাবিত করে। এটি এক অঞ্চলের জলবায়ুকে অন্য অঞ্চল থেকে ভিন্ন করে তোলে।
* জীববৈচিত্র্য: পর্বতগুলি বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর আশ্রয়স্থল, যা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ।
* সামরিক গুরুত্ব: অতীতে পর্বতগুলি প্রাকৃতিক দুর্গ হিসাবে কাজ করে প্রতিরক্ষা প্রদানে সহায়তা করেছে।
* কৃষি: পর্বতের ঢালে ধাপ চাষের মাধ্যমে কৃষি কাজ করা হয়, যেমন চা, কফি চাষ।
১০. সাহারা মরুভূমির ভূমিরূপ বর্ণনা করো।
সাহারার ভূমিরূপ অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং বিশাল:
* হামাদা: এটি পাথুরে মরুভূমি, যেখানে নুড়ি ও শিলাখণ্ড দ্বারা আবৃত বিস্তীর্ণ এলাকা দেখা যায়।
* রেগ: এটি বালি ও নুড়ির মিশ্রণ দ্বারা গঠিত সমতল বা ঢেউ খেলানো মরুভূমি।
* আর্গ: এটি বালুকাময় মরুভূমি, যেখানে বালির বিশাল স্তূপ বা টিলা (ডুন) দেখা যায়। এই টিলাগুলি বায়ুপ্রবাহের দ্বারা গঠিত হয় এবং স্থানান্তরিত হতে পারে।
* ওয়াদি: শুষ্ক নদীখাত, যা শুধুমাত্র বৃষ্টিপাতের সময় জলপূর্ণ হয়।
* মরুদ্যান: মরুভূমির মাঝে মাঝে যেখানে ভূগর্ভস্থ জল বা ঝরনার জল পাওয়া যায়, সেখানে মরুদ্যান সৃষ্টি হয়। এই স্থানগুলি সবুজ গাছপালা ও মানববসতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
* গিরি ও মালভূমি: সাহারার কিছু অংশে ছোট ছোট পাহাড় ও মালভূমিও দেখা যায়, যেমন আহাগার ও তিব্বতি পর্বতশ্রেণী।
এই বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূমিরূপ সাহারার পরিবেশকে জটিল ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
১১. আফ্রিকার সাভানা তৃণভূমি ও নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি কীভাবে আফ্রিকার জলবায়ুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তা ব্যাখ্যা কর।
আফ্রিকার তৃণভূমিগুলো জলবায়ুর সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত:
সাভানা তৃণভূমি: এটি নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্যের উত্তর ও দক্ষিণে অবস্থিত এবং মূলত ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে গড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং শীতকাল শুষ্ক থাকে। জলবায়ুর এই ঋতুভিত্তিক পরিবর্তন সাভানা তৃণভূমির বিকাশে সহায়ক। লম্বা ঘাস, বিচ্ছিন্ন গাছ (যেমন বাবলা, ইউক্যালিপটাস) এই অঞ্চলের প্রধান উদ্ভিদ। শুষ্ক মৌসুমে ঘাস শুকিয়ে যায়, কিন্তু আর্দ্র মৌসুমে আবার সতেজ হয়ে ওঠে। এটি বৃহৎ তৃণভোজী প্রাণী যেমন জেব্রা, জিরাফ, হাতি এবং তাদের শিকারী প্রাণী যেমন সিংহ, চিতার আবাসস্থল।
নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি (ভেল্ড): আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তে, নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এই তৃণভূমি দেখা যায়। এখানে গ্রীষ্মকালে উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া এবং শীতকালে মৃদু ও কিছুটা বৃষ্টিপাত হয়। সাভানার চেয়ে এখানকার ঘাস সাধারণত ছোট হয় এবং গাছপালা কম থাকে। এই জলবায়ু গবাদি পশু চারণের জন্য উপযুক্ত, তাই এই অঞ্চল পশুপালনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার কৃষিও জলবায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
১২. বহুমুখী নদী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য গুলি লেখ।
বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বলতে একটি নদীর জলকে একাধিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য গৃহীত বৃহৎ প্রকল্প বোঝায়। এর প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হলো:
* জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: বাঁধ নির্মাণ করে জলপ্রবাহকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা।
* জলসেচ: কৃষি জমিতে জল সরবরাহের জন্য খাল খনন করা, যা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
* বন্যা নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত জল ধরে রেখে বা নিয়ন্ত্রিতভাবে ছেড়ে দিয়ে বন্যা প্রতিরোধ করা।
* মৎস্য চাষ: জলাধারগুলিতে মৎস্য চাষের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা।
* নাব্যতার উন্নতি: নদীর গভীরতা বাড়িয়ে নৌচলাচল উপযোগী করা।
* পর্যটন ও বিনোদন: জলাধার ও সংলগ্ন এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা।
* মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ: নদীর অববাহিকায় ভূমি ক্ষয় রোধে সহায়তা করা।
* পানীয় জল সরবরাহ: শহর ও গ্রামীণ এলাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা করা।
১৩. লাভা সমভূমি ও লোয়েস সমভূমি সম্পর্কে বর্ণনা কর।
লাভা সমভূমি: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় ভূ-অভ্যন্তর থেকে নির্গত লাভা যখন ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে এবং ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে যে সমতল বা ঢেউ খেলানো ভূমিরূপ সৃষ্টি করে, তাকে লাভা সমভূমি বলে। এই সমভূমিগুলি সাধারণত অত্যন্ত উর্বর হয়, কারণ লাভা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম সহ বিভিন্ন খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চল একটি উল্লেখযোগ্য লাভা সমভূমি। এই মাটি কার্পাস চাষের জন্য খুব উপযোগী।
লোয়েস সমভূমি: মরুভূমি বা হিমবাহ অঞ্চল থেকে বায়ু দ্বারা বাহিত সূক্ষ্ম পলি, বালি কণা বহু দূরে সঞ্চিত হয়ে যে সমতল ভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে লোয়েস সমভূমি বলে। এই পলি অত্যন্ত সূক্ষ্ম হয় এবং এর কণাগুলি একে অপরের সাথে যুক্ত না হওয়ায় জলধারণ ক্ষমতা কম থাকে। লোয়েস সমভূমি অত্যন্ত উর্বর হয় এবং কৃষি কাজের জন্য উপযোগী। চীনের হোয়াংহো নদীর অববাহিকার লোয়েস সমভূমি এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
১৪. বিশ্ব উষ্ণায়ন সাহারা মরুভূমি ছাড়াও পৃথিবীর অন্য অঞ্চলে কি কি পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে তা লেখ।
বিশ্ব উষ্ণায়ন সাহারা মরুভূমি ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে ভয়াবহ পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে:
* মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি: মেরু অঞ্চলে বরফ গলে যাবে, ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে উপকূলীয় নিচু অঞ্চলগুলো প্লাবিত হবে এবং সুপেয় জলের সংকট দেখা দেবে।
* জলবায়ুর পরিবর্তন: বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তিত হবে। কোথাও অত্যধিক বৃষ্টিপাত হয়ে বন্যা হবে, আবার কোথাও শুষ্কতার কারণে খরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
* কৃষি ও খাদ্য সংকট: আবহাওয়ার পরিবর্তন ফসলের উৎপাদনকে প্রভাবিত করবে, যার ফলে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
* প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি: ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, দাবানল, তাপপ্রবাহের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা ও সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
* জীববৈচিত্র্য হ্রাস: অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থান হারাবে অথবা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
* স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব: তাপপ্রবাহ, নতুন রোগের বিস্তার এবং বিশুদ্ধ জলের অভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে।
১৫. আফ্রিকা মহাদেশের যে কোন তিনটি জলবায়ু অঞ্চলের বর্ণনা কর।
আফ্রিকা মহাদেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু অঞ্চল হলো:
১. নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল: নিরক্ষরেখার উভয় পাশে (প্রায় ৫° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ) এই জলবায়ু দেখা যায়। এখানে সারা বছর উচ্চ তাপমাত্রা (গড় ২৭°C) এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত (২০০-২৫০ সেমি) হয়। প্রতিদিন বিকেলে পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়। এই অঞ্চলে চিরহরিৎ ঘন অরণ্য জন্মায়, যেমন কঙ্গো অববাহিকার অরণ্য।
২. ক্রান্তীয় মৌসুমি বা সাভানা জলবায়ু অঞ্চল: নিরক্ষীয় অঞ্চলের উভয় পাশে প্রায় ৫°-২০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে এই জলবায়ু দেখা যায়। এখানে গ্রীষ্মকাল উষ্ণ ও আর্দ্র এবং শীতকাল উষ্ণ ও শুষ্ক থাকে। ঋতুভিত্তিক বৃষ্টিপাত এখানকার প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই জলবায়ু অঞ্চলে লম্বা ঘাস ও বিচ্ছিন্ন গাছের সমন্বয়ে সাভানা তৃণভূমি গড়ে উঠেছে।
৩. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল: মহাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের উপকূলীয় অঞ্চলে (ভূমধ্যসাগরের তীরে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন অঞ্চলে) এই জলবায়ু দেখা যায়। এখানকার বৈশিষ্ট্য হলো উষ্ণ, শুষ্ক গ্রীষ্মকাল এবং মৃদু, আর্দ্র শীতকাল। জলপাই, কমলা, আঙুর, কর্ক ওক-এর মতো চিরহরিৎ ও মোমযুক্ত পাতার গাছ এখানকার প্রধান উদ্ভিদ।
১৬. 'মানুষের জীবনের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক খুব নিবিড়'- ব্যাখ্যা কর।
মানুষের জীবনের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক সুপ্রাচীন ও অত্যন্ত নিবিড়:
* সভ্যতার আঁতুড়ঘর: বিশ্বের প্রায় সব প্রাচীন সভ্যতা যেমন সিন্ধু সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা, মেসোপটেমীয় সভ্যতা নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল, কারণ নদী পানীয় জল ও কৃষিকাজের জন্য জল সরবরাহ করত।
* কৃষি ও খাদ্য: নদীগুলি কৃষিকাজের জন্য সেচ ব্যবস্থা সরবরাহ করে, যা খাদ্য উৎপাদনে অপরিহার্য। নদীর পলিমাটি উর্বর প্লাবনভূমি তৈরি করে।
* পরিবহন ও যোগাযোগ: নদীপথ একসময় পণ্য পরিবহন ও যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল, আজও কিছু অঞ্চলে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
* জলবিদ্যুৎ ও শক্তি: নদীগুলি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস, যা শিল্প ও দৈনন্দিন জীবনে শক্তির চাহিদা মেটায়।
* অর্থনীতি: মৎস্যচাষ, পর্যটন, শিল্পের জন্য জল সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
* জীববৈচিত্র্য: নদীগুলি বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল এবং জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
নদী ছাড়া মানব জীবন কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব।
১৭. উদাহরণ ও চিত্রসহ পর্বতের শ্রেণীবিভাগ করে বর্ণনা দাও।
পর্বতগুলিকে তাদের গঠন প্রক্রিয়া অনুসারে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়:
১. ভঙ্গিল পর্বত (Fold Mountains): ভূ-আন্দোলনের ফলে ভূত্বকের পলিরাশি পার্শ্বচাপের কারণে ভাঁজ খেয়ে উপরে উঠে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়। এগুলি সাধারণত দীর্ঘ, উঁচু এবং একাধিক সমান্তরাল শৈলশ্রেণী নিয়ে গঠিত হয়। উদাহরণ: হিমালয়, আল্পস, রকি, আন্দিজ।
২. স্তুপ পর্বত (Block Mountains): ভূ-আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠে ফাটল বা চ্যুতির সৃষ্টি হলে ফাটলের মধ্যবর্তী অংশ উপরে উঠে বা দু'পাশের অংশ নিচে বসে স্তুপ পর্বতের সৃষ্টি হয় ।উদাহরণ: ভারতের সাতপুরা, জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট।
৩. আগ্নেয় পর্বত (Volcanic Mountains): ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত ম্যাগমা ফাটল দিয়ে ভূপৃষ্ঠে উঠে এসে সঞ্চিত হয়ে যে মোচাকৃতি পর্বতের সৃষ্টি হয় (যেমনটি উপরে বর্ণিত হয়েছে)। উদাহরণ: ইতালির ভিসুভিয়াস, জাপানের ফুজিয়ামা।
৪. ক্ষয়জাত পর্বত (Erosional Mountains): প্রাচীন মালভূমি বা পর্বত দীর্ঘদিন ধরে প্রাকৃতিক শক্তি (নদী, বায়ু, হিমবাহ) দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে যে অবশিষ্ট ভূমিরূপ পর্বতের আকার নেয়, তাকে ক্ষয়জাত পর্বত বলে। এগুলি সাধারণত নিচু ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। উদাহরণ: ভারতের আরাবল্লী, পূর্বঘাট।
১৮. মাটি সৃষ্টির নিয়ন্ত্রকগুলি আলোচনা করো।
মাটি সৃষ্টির প্রক্রিয়া একটি জটিল প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া এবং এটি বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক দ্বারা প্রভাবিত হয়। প্রধান নিয়ন্ত্রকগুলি হলো:
* জনক শিলা বা মূল উপাদান (Parent Material): মাটি যে শিলা থেকে তৈরি হয়, তাকে জনক শিলা বলে। এর খনিজ উপাদান, রং, গঠন, প্রবেশ্যতা ইত্যাদি মাটির বৈশিষ্ট্যকে সরাসরি প্রভাবিত করে। যেমন, গ্রানাইট থেকে উৎপন্ন মাটি বেলে বা পলিযুক্ত হয়, আর ব্যাসল্ট থেকে কৃষ্ণমৃত্তিকা।
* জলবায়ু (Climate): এটি মাটি সৃষ্টির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক। তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা মাটির আবহবিকার প্রক্রিয়া, জৈব পদার্থের পচন এবং মাটির স্তরবিন্যাসকে প্রভাবিত করে। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে দ্রুত মাটি সৃষ্টি হয়।
* ভূ-প্রকৃতি বা ভূমির ঢাল (Topography/Relief): ভূমির ঢাল মাটির গভীরতা, জল নিষ্কাশন, ক্ষয় এবং সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে। খাড়া ঢালে মাটি পাতলা হয় এবং ক্ষয় বেশি হয়, অন্যদিকে মৃদু ঢালে মাটি গভীর ও উর্বর হয়।
* জীবজগৎ ও উদ্ভিদ (Organisms/Biota): উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অণুজীব মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ, উর্বরতা এবং গঠনকে প্রভাবিত করে। অণুজীবগুলি জৈব পদার্থকে পচিয়ে হিউমাস তৈরি করে, যা মাটির উর্বরতা বাড়ায়।
* সময় (Time): মাটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। যত বেশি সময় ধরে আবহবিকার ও জৈব পদার্থের মিশ্রণ ঘটে, মাটি তত বেশি পরিপক্ক ও সুগঠিত হয়। তরুণ মাটির তুলনায় প্রাচীন মাটির বৈশিষ্ট্য বেশি স্পষ্ট হয়।
১৯. মালভূমির শ্রেণীবিভাগ করে আলোচনা কর।
মালভূমি হলো সুবিস্তৃত, উঁচু ও তরঙ্গায়িত বা সমতল ভূমিভাগ, যার পার্শ্বদেশ সাধারণত খাড়া ঢালযুক্ত হয়। উৎপত্তি ও অবস্থান অনুসারে মালভূমিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
১. পর্বত বেষ্টিত মালভূমি (Intermontane Plateau): দু'পাশে ভঙ্গিল পর্বত দ্বারা বেষ্টিত উঁচু মালভূমিকে পর্বত বেষ্টিত মালভূমি বলে। এগুলি সাধারণত পৃথিবীর বৃহত্তম ও সর্বোচ্চ মালভূমি হয়। উদাহরণ: তিব্বত মালভূমি (হিমালয় ও কুনলুন পর্বতের মাঝে), বলিভিয়ার মালভূমি।
২. পাদদেশীয় মালভূমি (Piedmont Plateau): পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত সমতল বা ঢেউ খেলানো মালভূমিকে পাদদেশীয় মালভূমি বলে। এগুলি পর্বতের ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থ দ্বারা গঠিত হয়। উদাহরণ: ভারতের মালব মালভূমি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপালাচিয়ান পাদদেশীয় মালভূমি।
৩. মহাদেশীয় মালভূমি (Continental Plateau): মহাদেশের সুবিস্তৃত অংশে অবস্থিত মালভূমি, যা সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত এবং পার্শ্বদেশ খাড়া ঢালযুক্ত হয়। এগুলি প্রাচীন শিলা দ্বারা গঠিত হয় এবং অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট লাভা দ্বারাও তৈরি হতে পারে। উদাহরণ: ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি, আফ্রিকার পূর্ব মালভূমি।
এছাড়াও, আরও কিছু প্রকারের মালভূমি দেখা যায়, যেমন:
* লাভা মালভূমি (Lava Plateau): আগ্নেয় অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত লাভা জমে যে মালভূমি তৈরি হয়।
* ক্ষয়জাত মালভূমি (Dissected Plateau): নদী বা অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে মালভূমি তৈরি হয়।
২০. আফ্রিকার সাভানা ও ভূমধ্যসাগরীয় উদ্ভিদ সম্বন্ধে আলোচনা কর।
আফ্রিকার জলবায়ুগত বৈচিত্র্যের কারণে সাভানা ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের উদ্ভিদ ভিন্ন প্রকৃতির হয়:
সাভানা উদ্ভিদ:
আফ্রিকার সাভানা তৃণভূমি নিরক্ষীয় অঞ্চলের চিরহরিৎ বনাঞ্চল এবং মরু অঞ্চলের মাঝামাঝি অবস্থিত। এখানকার জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির, যেখানে গ্রীষ্মকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া থাকে। সাভানা অঞ্চলে মূলত লম্বা ও ঘন ঘাস (প্রায় ৩-৪ মিটার উঁচু) জন্মায়। এর সাথে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গাছও দেখা যায়, যেমন বাবলা, বাঁশ, ইউক্যালিপটাস। এই গাছগুলির পাতা সাধারণত ছোট হয় এবং কিছু গাছের কাণ্ডে জল সঞ্চয়ের ক্ষমতা থাকে, যা শুষ্ক ঋতুতে টিকে থাকতে সাহায্য করে। এটি বিশাল তৃণভোজী প্রাণী এবং শিকারী প্রাণীদের আবাসস্থল।
ভূমধ্যসাগরীয় উদ্ভিদ:
আফ্রিকার উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে এই ধরণের উদ্ভিদ দেখা যায়। এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য হলো উষ্ণ, শুষ্ক গ্রীষ্মকাল এবং মৃদু, আর্দ্র শীতকাল। এখানকার উদ্ভিদরা এই শুষ্ক গ্রীষ্মকাল সহ্য করার জন্য বিশেষ অভিযোজন ঘটিয়েছে। এখানকার গাছপালা সাধারণত চিরহরিৎ হয় এবং তাদের পাতা ছোট, পুরু, মোমযুক্ত বা কাঁটাযুক্ত হয়, যাতে জলক্ষয় রোধ হয়। উদাহরণস্বরূপ, জলপাই, কর্ক ওক, লরেল, লেবু, কমলা এবং আঙুর গাছ এখানে দেখা যায়। এছাড়া, বিভিন্ন ধরনের গুল্ম ও সুগন্ধি গাছ যেমন ল্যাভেন্ডার, রোজমেরি ইত্যাদিও জন্মায়।
প্রশ্নের মান ৩ নং
- জলপ্রপাত কিভাবে সৃষ্টি হয় ছবি এঁকে ব্যাখ্যা কর।
- পর্বত বেষ্টিত মালভূমি ও ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি সৃষ্টি সম্পর্কে ছবি এঁকে ও উদাহরণ দিয়ে লেখ।
- পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ সমভূমিতে বাস করে কেন?
- ভারতের প্রধান নদী গঙ্গার উচ্চ মধ্য ও নিম্ন প্রবাহ কোথা থেকে কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত লেখ।
- নিরক্ষীয় চিরসবুজ অরণ্যের তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাহারা মরুভূমিতে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে তার সম্পর্কে লেখ।
- 'অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ' কাকে বলে ও কেন বলা হয়?
- নীলনদ অববাহিকায় মিশরের অধিকাংশ মানুষ বসবাস করে কেন?
- পৃথিবীর বৃহত্তম নদী আমাজনের কোন বদ্বীপ নেই কেন?
- আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ।
- পূর্ব আফ্রিকায় প্রস্ত উপত্যকা সৃষ্টি হয়েছে কেন?
- মিশরকে 'নীলনদের দান' বলা হয় কেন?
- গিরিখাত ও ক্যানিয়ন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
- তিনটি প্রাচীন সভ্যতার নাম লেখ। সেগুলি কোন কোন নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল?
- বদ্বীপ কাকে বলে? বদ্বীপ গঠনের তিনটি শর্ত লেখ।
- সাহারা মরুভূমি আর্গ, হামাদা, রেগ বলতে কী বোঝো?
- আফ্রিকার তিনটি নদীর দৈর্ঘ্য উৎস ও মোহনা উল্লেখ কর।
- পাললিক ও রূপান্তরিত শিলার মধ্যে পার্থক্য লেখ।
- সমভূমি কত প্রকার ও কি কি? সংক্ষেপে বিভিন্ন প্রকার সমভূমির বর্ণনা দাও।
জলপ্রপাত কিভাবে সৃষ্টি হয়?
নদীর গতিপথে কঠিন ও নরম শিলা অনুভূমিকভাবে বা উলম্বভাবে থাকলে, নরম শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নিচু হয়ে যায়। কিন্তু কঠিন শিলা সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না, যা খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। এর ফলে নদী জল উচ্চভূমি থেকে নিচু ভূমিতে সজোরে পতিত হয়ে জলপ্রপাত সৃষ্টি করে। এর একটি চিত্র নিচে দেওয়া হলো:
উচ্চভূমি
/|\
/ | \
/ | \ <-- জলপ্রপাত
/ | \
/ কঠিন | শিলা \
/_______|________\
|
|
নরম শিলা
পর্বত বেষ্টিত মালভূমি ও ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি সৃষ্টি সম্পর্কে
পর্বত বেষ্টিত মালভূমি:
চারিদিকে উঁচু পর্বত দ্বারা বেষ্টিত মালভূমিকে পর্বত বেষ্টিত মালভূমি বলে। এই মালভূমিগুলো সাধারণত ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির সময় তাদের মধ্যে অবস্থিত নিচু অংশগুলো উপরে উঠে তৈরি হয়। এর একটি উদাহরণ হলো তিব্বত মালভূমি, যা হিমালয়, কুনলুন, এবং কারাকোরাম পর্বতশ্রেণী দ্বারা বেষ্টিত।
পর্বত
/ \
/ মালভূমি \
/__________\
পর্বত
ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি:
দীর্ঘদিন ধরে নদী বা অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কার্যের ফলে প্রাচীন মালভূমিগুলো বিচ্ছিন্ন বা বিভক্ত হয়ে গেলে তাকে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি বলে। এই মালভূমিগুলো সাধারণত ঢেউ খেলানো প্রকৃতির হয়। এর একটি উদাহরণ হলো ছোটনাগপুর মালভূমি, যা দামোদর, সুবর্ণরেখা, বরাকর ইত্যাদি নদী দ্বারা বিভক্ত।
_____ _____
/ \ / \
/ মালভূমি \ / মালভূমি \
|---------|-----------|
নদী নদী
পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ সমভূমিতে বাস করে কেন?
পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ সমভূমিতে বাস করে কারণ এই অঞ্চলে জীবনধারণের জন্য অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান। সমভূমি অঞ্চল সাধারণত কৃষিকাজের জন্য উর্বর হয়, যা খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সহজ এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের প্রসারও বেশি হয়। এছাড়াও, সমভূমি অঞ্চলে বাড়িঘর নির্মাণ, পরিবহন এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা সহজ হওয়ায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি।
ভারতের প্রধান নদী গঙ্গার উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন প্রবাহ কোথা থেকে কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত?
ভারতের প্রধান নদী গঙ্গার প্রবাহকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:
* উচ্চ প্রবাহ: গোমুখের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত প্রায় ২৫০ কিমি দীর্ঘ এই প্রবাহে গঙ্গা পাহাড়ি অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে তীব্র গতিতে প্রবাহিত হয়।
* মধ্য প্রবাহ: হরিদ্বার থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত প্রায় ১৪০০ কিমি বিস্তৃত। এই অংশে নদীর গতি কিছুটা ধীর হয় এবং এটি পলি সঞ্চয় শুরু করে।
* নিম্ন প্রবাহ: মুর্শিদাবাদ থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত প্রায় ৫৬০ কিমি এই প্রবাহে নদী অত্যন্ত ধীর গতিতে প্রবাহিত হয় এবং বিপুল পরিমাণ পলি সঞ্চয় করে বদ্বীপ সৃষ্টি করে।
নিরক্ষীয় চিরসবুজ অরণ্যের তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
নিরক্ষীয় চিরসবুজ অরণ্যের তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো:
১. ঘন ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বৃক্ষরাজি: এই অরণ্যে সারাবছর প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং উচ্চ তাপমাত্রা থাকায় গাছপালা খুব ঘন এবং বিভিন্ন প্রজাতির হয়। এখানে সাধারণত এক স্তরবিশিষ্ট গাছ দেখা যায় না, বরং একাধিক স্তরের গাছপালা বিদ্যমান।
২. চিরহরিৎ প্রকৃতি: এখানে সারা বছর ধরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় বলে গাছপালা তাদের পাতা একসঙ্গে ঝরায় না। তাই অরণ্যটি সারাবছর সবুজ থাকে, যা একে 'চিরসবুজ' অরণ্য করে তুলেছে।
৩. অন্ধকারাচ্ছন্ন ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ: ঘন গাছপালার ছাউনির কারণে সূর্যের আলো সহজে মাটিতে পৌঁছাতে পারে না। এর ফলে অরণ্যের অভ্যন্তরে দিনের বেলায়ও অন্ধকারাচ্ছন্ন ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ বিরাজ করে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাহারা মরুভূমিতে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাহারা মরুভূমিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েক হাজার বছর আগে সাহারা একটি উর্বর ও সবুজ তৃণভূমি অঞ্চল ছিল, যেখানে নদ-নদী প্রবাহিত হত এবং প্রাণীজগত সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ধীরে ধীরে বৃষ্টিপাত কমে যায় এবং তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, যার ফলস্বরূপ এই অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়। বর্তমানে, উষ্ণায়ণ এবং মানবসৃষ্ট কার্যকলাপের কারণে সাহারা মরুভূমির আয়তন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মরুভূমি সম্প্রসারণ নামে পরিচিত।
'অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ' কাকে বলে ও কেন বলা হয়?
আফ্রিকা মহাদেশকে 'অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ' বলা হয়। এর প্রধান কারণ হলো, ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা উনিশ শতকের আগে এই মহাদেশের অভ্যন্তরীণ অঞ্চল সম্পর্কে খুব কম জানত। দুর্গম ভূখণ্ড, ঘন বন এবং প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এই মহাদেশের বেশিরভাগ অংশ অনাবিষ্কৃত ও অজানা ছিল। এছাড়াও, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণেও এই মহাদেশটি বহুলাংশে অনুন্নত ও বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, যা এটিকে 'অন্ধকারাচ্ছন্ন' আখ্যা পেতে সাহায্য করেছিল।
নীলনদ অববাহিকায় মিশরের অধিকাংশ মানুষ বসবাস করে কেন?
নীলনদ অববাহিকায় মিশরের অধিকাংশ মানুষ বসবাস করে কারণ নীল নদ এই শুষ্ক মরুভূমি দেশে জীবনধারণের প্রধান উৎস। নীল নদের পলিসমৃদ্ধ অববাহিকা কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত উর্বর, যা খাদ্য উৎপাদনে অপরিহার্য। এছাড়াও, নীল নদ পানীয় জল, মৎস্যসম্পদ এবং পরিবহন ব্যবস্থার একটি প্রধান মাধ্যম। মরুভূমির প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য মানুষেরা প্রাচীনকাল থেকেই নীল নদের উপর নির্ভরশীল, তাই এর অববাহিকাতেই মিশরের জনবসতি কেন্দ্রীভূত হয়েছে।
পৃথিবীর বৃহত্তম নদী আমাজনের কোন বদ্বীপ নেই কেন?
পৃথিবীর বৃহত্তম নদী আমাজনের একটি সুস্পষ্ট বদ্বীপ নেই। এর কয়েকটি কারণ রয়েছে:
১. প্রচুর পলি সমুদ্রের গভীরে চলে যায়: আমাজন নদী প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ পলি বহন করে আনে, কিন্তু এর মোহনার কাছে সমুদ্রের গভীরতা অনেক বেশি। ফলে পলি সহজেই গভীর সমুদ্রে চলে যায় এবং সঞ্চিত হতে পারে না।
২. শক্তিশালী সামুদ্রিক স্রোত: আটলান্টিক মহাসাগরের শক্তিশালী জোয়ার এবং সামুদ্রিক স্রোত আমাজন নদীর পলিকে মোহনার কাছে জমতে দেয় না, বরং তা সমুদ্রে ছড়িয়ে দেয়।
৩. প্রশস্ত মোহনা: আমাজনের মোহনা অত্যন্ত প্রশস্ত, যা পলি সঞ্চয়ের জন্য অনুকূল নয়।
আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।
আগ্নেয় শিলার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:
১. কঠিন ও দানাদার: এই শিলা ম্যাগমা বা লাভা ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে গঠিত হয় বলে সাধারণত কঠিন এবং দানাদার প্রকৃতির হয়। দানাগুলোর আকার নির্ভর করে ঠান্ডা হওয়ার গতির উপর।
২. স্তরবিহীন ও জীবাশ্মবিহীন: আগ্নেয় শিলা স্তরীভূত হয় না এবং এর মধ্যে কোনো জীবাশ্ম দেখা যায় না, কারণ এটি অত্যধিক তাপমাত্রায় গঠিত হয়।
৩. স্ফটিকাকার: এই শিলায় বিভিন্ন খনিজের স্ফটিক দেখা যায়। স্ফটিকগুলো বড় বা ছোট হতে পারে, যা শিলার ঠান্ডা হওয়ার হারের উপর নির্ভর করে।
৪. অপ্রবেশ্য: সাধারণত আগ্নেয় শিলা জল বা অন্যান্য তরল পদার্থের জন্য অপ্রবেশ্য হয়।
পূর্ব আফ্রিকায় গ্রস্থ উপত্যকা সৃষ্টি হয়েছে কেন?
পূর্ব আফ্রিকায় গ্রস্থ উপত্যকা সৃষ্টি হয়েছে ভূত্বকের টানজনিত কারণে (Tensional forces)। এই অঞ্চলে আফ্রিকা প্লেট দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত হয়ে ক্রমশ একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে এবং এই ফাটল বরাবর ভূত্বকের অংশ বিশেষ নিচে বসে যাচ্ছে। এই অবনমিত অংশগুলোই দীর্ঘ, সংকীর্ণ এবং গভীর গ্রস্থ উপত্যকা (Rift Valley) তৈরি করেছে, যা পূর্ব আফ্রিকা গ্রস্থ উপত্যকা নামে পরিচিত। এটি একটি সক্রিয় টেকটোনিক অঞ্চল।
মিশরকে 'নীলনদের দান' বলা হয় কেন?
মিশরকে যথার্থই 'নীলনদের দান' বলা হয়। কারণ নীল নদ ছাড়া মিশরের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না। মিশরের প্রায় ৯৫% জনসংখ্যা নীল নদের অববাহিকায় বসবাস করে। এই নদই মিশরের কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় উর্বর পলিমাটি এবং জল সরবরাহ করে। নীল নদ প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমান মিশরের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মূল ভিত্তি। এটি পানীয় জল, পরিবহন এবং মৎস্যসম্পদেরও প্রধান উৎস।
গিরিখাত ও ক্যানিয়ন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
গিরিখাত:
নদীর উচ্চগতিতে, বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে, নদীর প্রবল স্রোত যখন কঠিন শিলার মধ্যে দিয়ে খাড়াভাবে ক্ষয় করে একটি সংকীর্ণ ও গভীর উপত্যকা তৈরি করে, তখন তাকে গিরিখাত বলে। এর পার্শ্বদেশগুলি সাধারণত খাড়া বা উলম্ব হয়।
উদাহরণ: সিন্ধু নদের দ্বারা সৃষ্ট বুঞ্জি গিরিখাত।
ক্যানিয়ন:
ক্যানিয়ন হলো গিরিখাতেরই একটি বৃহৎ ও বিস্তৃত রূপ, যা মূলত শুষ্ক বা অর্ধ-শুষ্ক অঞ্চলে সৃষ্টি হয়। এখানে নদী দীর্ঘকাল ধরে অপেক্ষাকৃত নরম শিলাস্তরকে গভীরভাবে ক্ষয় করে অতি গভীর ও প্রশস্ত উপত্যকা তৈরি করে। এর পার্শ্বদেশগুলো প্রায়শই সিঁড়ির মতো ধাপযুক্ত হয়।
উদাহরণ: কলোরাডো নদীর দ্বারা সৃষ্ট গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।
তিনটি প্রাচীন সভ্যতার নাম লেখ। সেগুলি কোন কোন নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল?
এখানে তিনটি প্রাচীন সভ্যতার নাম এবং তারা যে নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল তার উল্লেখ করা হলো:
১. মেসোপটেমীয় সভ্যতা: এটি টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল।
২. মিশরীয় সভ্যতা: এটি নীল নদের তীরে গড়ে উঠেছিল।
৩. হরপ্পা সভ্যতা (সিন্ধু সভ্যতা): এটি সিন্ধু নদের তীরে গড়ে উঠেছিল।
বদ্বীপ কাকে বলে? বদ্বীপ গঠনের তিনটি শর্ত লেখ।
বদ্বীপ:
নদীর নিম্নগতিতে মোহনার কাছে যখন নদীর স্রোত অত্যন্ত ধীর হয়ে যায় এবং নদী বাহিত পলি, বালি, কাঁকর ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণাকার বা পাখার মতো ভূমিরূপ গঠন করে, তখন তাকে বদ্বীপ বলে। গ্রিক অক্ষর ডেল্টা (\\Delta) এর মতো দেখতে হওয়ায় এর নামকরণ হয়েছে 'বদ্বীপ'।
বদ্বীপ গঠনের তিনটি শর্ত:
১. নদীবাহিত পলির প্রাচুর্য: নদীতে প্রচুর পরিমাণে পলি, বালি ও অন্যান্য পদার্থ থাকতে হবে, যা সঞ্চিত হয়ে বদ্বীপ গঠন করতে পারে।
২. ধীর গতিসম্পন্ন নদী: মোহনার কাছে নদীর গতি খুব ধীর হতে হবে, যাতে বাহিত পলি সহজেই থিতিয়ে পড়তে পারে।
৩. শান্ত সমুদ্র বা উপসাগর: মোহনার কাছে সমুদ্র বা উপসাগরের জল শান্ত হতে হবে। শক্তিশালী জোয়ার-ভাটা বা সামুদ্রিক স্রোত থাকলে পলি জমতে পারে না।
সাহারা মরুভূমি আর্গ, হামাদা, রেগ বলতে কী বোঝো?
সাহারা মরুভূমির বিভিন্ন ভূপ্রকৃতির স্থানীয় নামগুলি হলো:
* আর্গ (Erg): আর্গ হলো সাহারা মরুভূমির সুবিশাল বালিরাশি বা বালুকাময় মরুভূমি। এটি ঢেউ খেলানো বালিয়াড়ি দ্বারা গঠিত। সাহারার প্রায় ২০% অঞ্চল আর্গ দ্বারা গঠিত।
* হামাদা (Hamada): হামাদা হলো সাহারা মরুভূমির শিলাময় বা প্রস্তরময় মরুভূমি। এখানে ভূপৃষ্ঠে বড় বড় পাথর, নুড়ি এবং শিলাখণ্ড ছড়িয়ে থাকে। এটি মূলত ক্ষয়প্রাপ্ত মালভূমি অঞ্চল।
* রেগ (Reg): রেগ হলো সাহারা মরুভূমির নুড়ি ও কাঁকরময় মরুভূমি। এখানে ছোট ছোট নুড়ি পাথর ও কাঁকর দ্বারা ভূমি আবৃত থাকে। এটি মূলত জল বা বাতাসের দ্বারা সূক্ষ্ম বালি অপসারিত হয়ে গঠিত হয়।
আফ্রিকার তিনটি নদীর দৈর্ঘ্য, উৎস ও মোহনা উল্লেখ কর।
আফ্রিকার তিনটি প্রধান নদীর দৈর্ঘ্য, উৎস এবং মোহনা নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. নীল নদ:
* দৈর্ঘ্য: প্রায় ৬,৬৫০ কিমি (বিশ্বের দীর্ঘতম নদী)
* উৎস: রুয়ান্ডার বুুরুন্ডি থেকে উৎপন্ন কগেরা নদী এবং ইথিওপিয়ার তানা হ্রদ।
* মোহনা: ভূমধ্যসাগর।
২. কঙ্গো নদী:
* দৈর্ঘ্য: প্রায় ৪,৭০০ কিমি
* উৎস: পূর্ব আফ্রিকার উচ্চভূমি, লুয়ালাবা নদীর উৎস।
* মোহনা: আটলান্টিক মহাসাগর।
৩. নাইজার নদী:
* দৈর্ঘ্য: প্রায় ৪,১৮০ কিমি
* উৎস: পশ্চিম আফ্রিকার উচ্চভূমি, গিনি।
* মোহনা: আটলান্টিক মহাসাগর (গিনি উপসাগর)।
পাললিক ও রূপান্তরিত শিলার মধ্যে পার্থক্য লেখ।
| বৈশিষ্ট্য | পাললিক শিলা | রূপান্তরিত শিলা |
|---|---|---|
| উৎপত্তি | পলি, কাদা, বালি ইত্যাদি সঞ্চিত ও সংবদ্ধ হয়ে গঠিত হয়। | আগ্নেয় বা পাললিক শিলা উচ্চ তাপ ও চাপের ফলে পরিবর্তিত হয়ে গঠিত হয়। |
| গঠন | সাধারণত স্তরীভূত হয় এবং নরম হয়। | কঠিন ও কেলাসিত হয়, অনেক সময় স্তরীভবন দেখা যায় না বা পরিবর্তিত হয়। |
| জীবাশ্ম | জীবাশ্ম দেখা যায়, কারণ পলি জমে জীবদেহ চাপা পড়তে পারে। | সাধারণত জীবাশ্ম থাকে না, কারণ উচ্চ তাপ ও চাপে জীবাশ্ম নষ্ট হয়ে যায়। |
| উদাহরণ | বেলেপাথর, চুনাপাথর, কাদা পাথর। | মার্বেল, স্লেট, নিস, কোয়ার্টজাইট। |
সমভূমি কত প্রকার ও কি কি? সংক্ষেপে বিভিন্ন প্রকার সমভূমির বর্ণনা দাও।
সমভূমি মূলত তিন প্রকারের হয়ে থাকে:
১. সঞ্চয়জাত সমভূমি: নদী, বায়ু, হিমবাহ বা সমুদ্রের দ্বারা বাহিত পলি, বালি বা অন্যান্য পদার্থ সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমি গঠিত হয়, তাকে সঞ্চয়জাত সমভূমি বলে। এগুলি সাধারণত উর্বর হয়।
উদাহরণ: গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি।
২. ক্ষয়জাত সমভূমি: দীর্ঘকাল ধরে নদী, বায়ু, হিমবাহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কার্যের ফলে উঁচু ভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমতল বা ঢেউ খেলানো ভূমিতে পরিণত হলে তাকে ক্ষয়জাত সমভূমি বলে। এগুলি সাধারণত কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত হয়।
উদাহরণ: ছোটনাগপুর মালভূমির অংশবিশেষ।
৩. ভূ-গাঠনিক সমভূমি: ভূ-আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠের কোনো নিচু অংশ উপরে উঠে এসে বা কোনো অংশ বসে গিয়ে সমতল ভূমির সৃষ্টি হলে তাকে ভূ-গাঠনিক সমভূমি বলে। এগুলি সাধারণত মহাদেশীয় পাতগুলির সঞ্চালনের ফলে তৈরি হয়।
উদাহরণ: রাশিয়ার স্টেপস সমভূমি।