প্রশ্নঃ আলাউদ্দিন খলজি কিভাবে মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবিলা করেছিলেন?
উত্তরঃ আলাউদ্দিন খলজি তার রাজত্বকালে বেশ কয়েকবার শক্তিশালী মোঙ্গল আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছিলেন। এই আক্রমণগুলো মোকাবিলা করার জন্য তিনি একটি বিশাল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করেন এবং সৈন্যদের নগদ বেতন প্রদান করে তাদের আনুগত্য নিশ্চিত করেন। তিনি সীমান্তবর্তী দুর্গগুলো মেরামত ও নতুন দুর্গ নির্মাণ করে সেগুলোকে সুরক্ষিত করেন এবং সেখানে অভিজ্ঞ সেনাপতিদের নিযুক্ত করেন। আলাউদ্দিন কেবল আত্মরক্ষামূলকই ছিলেন না, বরং আগ্রাসী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তিনি মোঙ্গল আক্রমণকারীদের দ্রুত ধাওয়া করে তাদের পরাজিত করতেন। একইসাথে, অর্থনৈতিক সংস্কার যেমন বাজার নিয়ন্ত্রণ ও কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তিনি সামরিক ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। তার এই সুচিন্তিত পদক্ষেপগুলো মোঙ্গলদের বারংবার আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছিল।
প্রশ্নঃ 'সুলহ-ই কুল' কী?
উত্তরঃ 'সুলহ-ই কুল' একটি ফার্সি শব্দগুচ্ছ যার অর্থ 'সর্বজনীন শান্তি' বা 'সকলের প্রতি সহনশীলতা'। মুঘল সম্রাট আকবর এই নীতিটি প্রবর্তন করেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে একটি বহু-ধর্মীয় ও বহু-জাতিগত সাম্রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে ধর্মীয় বিভেদ দূর করা জরুরি। এই নীতির মূল ভিত্তি ছিল সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, পক্ষপাতহীনতা এবং ন্যায়বিচার। আকবর জিজিয়া কর (অমুসলিমদের উপর কর) তুলে নেন এবং ইবাদত খানায় (উপাসনা কক্ষ) বিভিন্ন ধর্মের পণ্ডিতদের নিয়ে আলোচনা করতেন। 'সুলহ-ই কুল' আকবরের দীন-ই-ইলাহী ধারণারও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, যা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং ধর্মীয় সম্প্রীতির উপর জোর দিয়েছিল।
প্রশ্নঃ ইক্তা ও ইক্তাদার বলতে কি বোঝায়?
উত্তরঃ দিল্লি সুলতানি আমলে প্রশাসনিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ইক্তা প্রথা। ইক্তা বলতে বোঝাত একটি নির্দিষ্ট ভূমি রাজস্ব অনুদান। সুলতানরা সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের তাদের সেবার বিনিময়ে নগদ বেতনের পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে রাজস্ব আদায়ের অধিকার দিতেন। এটি ছিল অস্থায়ী, জমির মালিকানা নয়। যিনি ইক্তা লাভ করতেন, তাকে ইক্তাদার বলা হত। ইক্তাদাররা তাদের ইক্তা থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করতেন, তার একটি অংশ নিজেদের ভরণপোষণ ও সৈন্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রেখে বাকিটা কেন্দ্রীয় কোষাগারে জমা দিতেন। একইসাথে, ইক্তাদারদের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সুলতানের জন্য সৈন্য সরবরাহ করার দায়িত্বও ছিল।
প্রশ্নঃ খানুয়ার ও ঘর্ঘরার যুদ্ধের মধ্যে তুলনা কর।
উত্তরঃ খানুয়ার (১৫২৭) ও ঘর্ঘরার (১৫২৯) উভয় যুদ্ধই মুঘল সম্রাট বাবরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
খানুয়ার যুদ্ধ: বাবর মেওয়ারের রানা সংগ্রাম সিংহ ও রাজপুতদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। এর কারণ ছিল ভারতে বাবরের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং রাজপুতদের প্রতিরোধ দমন করা। এই যুদ্ধে বাবরের জয় ভারতে মুঘল শাসনের ভিত্তি আরও শক্তিশালী করে এবং রাজপুত শক্তিকে দুর্বল করে দেয়।
ঘর্ঘরার যুদ্ধ: বাবর আফগান সর্দার (মাহমুদ লোদি) ও বাংলার সুলতান নুসরাত শাহের সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। এই যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল আফগান প্রতিরোধকে চূড়ান্তভাবে দমন করা। বাবরের বিজয়ের ফলে আফগানদের ক্ষমতা ভেঙে যায় এবং মুঘল সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় হয়।
উভয় যুদ্ধেই বাবর তার আধুনিক সামরিক কৌশল ও কামানের ব্যবহার করে জয়ী হয়েছিলেন। খানুয়ার যুদ্ধ বাবরের ভারতে স্থায়ী শাসনের পথ পরিষ্কার করে, আর ঘর্ঘরার যুদ্ধ আফগান হুমকি নির্মূল করে তার সাম্রাজ্যকে স্থিতিশীল করে।
প্রশ্নঃ বাংলার বারো ভূঁইয়াদের সম্পর্কে কি জানো লেখো।
উত্তরঃ বাংলার বারো ভূঁইয়ারা ছিলেন মুঘল আমলে, বিশেষ করে ১৫৭০ থেকে ১৬১০ সালের মধ্যে, বাংলার স্বাধীন বা অর্ধ-স্বাধীন জমিদার ও স্থানীয় শাসক গোষ্ঠী। 'বারো' শব্দটি আক্ষরিক অর্থে সংখ্যা নয়, বরং অনেককে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। সম্রাট আকবরের সময় মুঘলরা বাংলা দখল করতে চাইলে, এই ভূঁইয়ারা একত্রিত হয়ে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ইশা খাঁ ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা, যিনি সোনারগাঁও এবং ভাটির (পূর্ব বাংলা) শাসক ছিলেন। তার নেতৃত্বে ভূঁইয়ারা মুঘল সেনাপতিদের অনেকবার পরাজিত করেন। এই ভূঁইয়াদের এলাকাগুলো মূলত নদীমাতৃক ছিল, যা তাদের প্রতিরক্ষায় সুবিধা দিত। শেষ পর্যন্ত, মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ও তার সেনাপতি ইসলাম খান চিশতি ১৬১০ সালে ইশা খাঁর মৃত্যুর পর ভূঁইয়াদের পরাজিত করে বাংলাকে মুঘল সাম্রাজ্যের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনেন।
প্রশ্নঃ টীকা লেখ: তুরস্ক দন্ড
উত্তরঃ 'তুরস্ক দন্ড' সম্ভবত 'বন্দেগান-ই-চিহলগানি' বা 'চল্লিশ চক্র'-কে বোঝানো হয়েছে। এটি দিল্লি সুলতানি আমলের সুলতান ইলতুৎমিশ কর্তৃক গঠিত চল্লিশ জন বিশ্বস্ত তুর্কি ক্রীতদাসের একটি অভিজাত পরিষদ ছিল। ইলতুৎমিশ তার ক্ষমতা সুসংহত করতে এবং স্থানীয় আমিরদের প্রভাব কমাতে এটি গঠন করেন। এই চল্লিশ জন দাস বিভিন্ন উচ্চ সামরিক ও বেসামরিক পদে নিযুক্ত ছিলেন এবং সুলতানের প্রধান পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করতেন। ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর, 'চল্লিশ চক্র' অত্যন্ত ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে এবং সুলতানদের নির্বাচন ও ক্ষমতাচ্যুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমনকি সুলতানা রাজিয়ার পতনেও তাদের হাত ছিল। অবশেষে, গিয়াসউদ্দিন বলবন, যিনি নিজেও একসময় এর সদস্য ছিলেন, এই চক্রের ক্ষমতা খর্ব করে তাদের নির্মূল করেন, কারণ তারা সাম্রাজ্যের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
প্রশ্নঃ টীকা লেখ: বণিক
উত্তরঃ বণিক বলতে এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বা বিনিময়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। সহজ কথায়, যিনি ব্যবসা করেন। প্রাচীনকাল থেকেই বণিকরা সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। তারা উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী হিসেবে কাজ করেন, বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য সংগ্রহ করে সেগুলোর চাহিদা অনুযায়ী অন্যত্র বিক্রি করেন। বণিকদের মাধ্যমেই স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রসার লাভ করে, যা নতুন বাজার তৈরি করে এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে পণ্যের আদান-প্রদান সম্ভব করে তোলে। তারা ব্যবসায় মূলধন বিনিয়োগ করেন এবং অর্থনৈতিক বিকাশে অবদান রাখেন। বণিকদের যাতায়াতের ফলে শুধু পণ্যেরই নয়, সংস্কৃতি, ধারণা এবং জ্ঞানেরও আদান-প্রদান ঘটে। আধুনিক যুগেও বণিকরা অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেন।
প্রশ্নঃ টীকা লেখ: ঘর্ঘরার যুদ্ধ
উত্তরঃ ঘর্ঘরার যুদ্ধ ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট বাবর এবং আফগান সর্দার (মাহমুদ লোদি) ও বাংলার সুলতান নুসরাত শাহের সম্মিলিত বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। পানিপথ ও খানুয়ার যুদ্ধের পর বাবরের প্রধান লক্ষ্য ছিল আফগান প্রতিরোধকে চূড়ান্তভাবে দমন করা। বিহারের পাটনার কাছে ঘর্ঘরা নদীর তীরে এই যুদ্ধ হয়েছিল, যা ছিল সম্ভবত জল ও স্থল উভয় স্থানে সংঘটিত হওয়া প্রথম যুদ্ধ। বাবর তার উন্নত সামরিক কৌশল এবং কামানের ব্যবহারে জয়ী হন। এই বিজয়ের ফলে আফগানদের ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যায় এবং বাবরের উত্তর ভারতের উপর নিয়ন্ত্রণ আরও সুদৃঢ় হয়। বাংলার সুলতান বাবরের সাথে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই যুদ্ধ ছিল বাবরের ভারতে শেষ বড় সামরিক অভিযান, যা মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি আরও মজবুত করে।
প্রশ্নঃ টীকা লেখ: লালকেল্লা
উত্তরঃ লালকেল্লা, যা দিল্লির লাল কেল্লা নামে পরিচিত, ভারতের অন্যতম বিখ্যাত মুঘল স্থাপত্য এবং একটি ঐতিহাসিক দুর্গ-প্রাসাদ। এটি ১৭শ শতাব্দীতে মুঘল সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। ১৬৩৮ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে প্রায় ১৬৪৮ সালে শেষ হয়, যখন শাহজাহান তার রাজধানী আগ্রা থেকে দিল্লিতে (শাহজাহানাবাদ) স্থানান্তরিত করেন। এর নামকরণ হয়েছে এর বিশাল লাল বেলেপাথরের দেয়ালের জন্য। কেল্লার অভ্যন্তরে দিওয়ান-ই-আম, দিওয়ান-ই-খাস, রঙ্গ মহল এবং নহর-ই-বেহেশত-এর মতো অপূর্ব স্থাপত্য রয়েছে। এটি প্রায় ২০০ বছর ধরে মুঘল সাম্রাজ্যের ক্ষমতার কেন্দ্র ছিল। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা এটি দখল করে। স্বাধীনতা লাভের পর, প্রতি বছর ১৫ আগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখান থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এটি ভারতের স্বাধীনতা ও জাতীয় গর্বের প্রতীক এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত।
প্রশ্নঃ টীকা লেখ: ইকতা ব্যবস্থা
উত্তরঃ ইকতা ব্যবস্থা ছিল দিল্লি সুলতানি আমলের একটি প্রধান ভূমি রাজস্ব ও প্রশাসনিক প্রথা, যা সুলতান ইলতুৎমিশের সময়ে প্রবর্তিত হয়। এটি নগদ বেতনের পরিবর্তে সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের তাদের সেবার বিনিময়ে নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে রাজস্ব আদায়ের অধিকার প্রদান করত। এই অধিকারকে ইকতা এবং এর ধারককে ইক্তাদার বলা হত। ইক্তাদাররা তাদের ইকতা থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করে তার একটি অংশ নিজেদের ও সৈন্যের খরচ বাবদ রাখতেন এবং বাকিটা কেন্দ্রীয় কোষাগারে জমা দিতেন। একইসাথে, তাদের এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সুলতানের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য সরবরাহ করার দায়িত্বও ছিল। এই ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারকে দূরবর্তী অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে এবং সামরিক ব্যয় নির্বাহ করতে সাহায্য করেছিল। তবে, পরবর্তীকালে ইক্তাদারদের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জায়গিরকে বংশানুক্রমিক করার প্রবণতা এর দুর্বলতার কারণ হয়।
প্রশ্নঃ টীকা লেখ: জায়গিরদারি ব্যবস্থা
উত্তরঃ জায়গিরদারি ব্যবস্থা ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমি রাজস্ব ও প্রশাসনিক প্রথা, যা দিল্লি সুলতানি আমলের ইকতা ব্যবস্থার একটি উন্নত রূপ। মুঘল সম্রাট আকবরের সময় এটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। এই ব্যবস্থায়, মুঘল মনসবদারদের (সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা) তাদের সেবার বিনিময়ে নগদ বেতনের পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে ভূমি রাজস্ব আদায়ের অধিকার প্রদান করা হত। এই অধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে জায়গিরদার বলা হত। জায়গিরদাররা তাদের জায়গির থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করে নিজেদের খরচ ও অধীনস্থ সৈন্যদের (সওয়ার) ভরণপোষণ করতেন। তাদের প্রধান দায়িত্ব ছিল সামরিক সেবা প্রদান ও স্থানীয় প্রশাসন পরিচালনা করা। জায়গিরগুলি সাধারণত স্থানান্তরযোগ্য ছিল, যাতে জায়গিরদাররা স্থানীয়ভাবে অতিরিক্ত ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে না পারেন। আওরঙ্গজেবের সময় জায়গির সংকট ও দুর্নীতির কারণে এই ব্যবস্থায় দুর্বলতা দেখা দেয়, যা মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ ছিল।
প্রশ্নঃ টীকা লেখ: বন্দেগান ই চিহলগানি
উত্তরঃ বন্দেগান-ই-চিহলগানি, যা 'চল্লিশ চক্র' নামেও পরিচিত, দিল্লি সুলতানি আমলের সুলতান ইলতুৎমিশ কর্তৃক গঠিত চল্লিশ জন তুর্কি ক্রীতদাসের একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী পরিষদ ছিল। ইলতুৎমিশ তার ব্যক্তিগত ক্ষমতা সুসংহত করতে এবং স্থানীয় আমিরদের প্রভাব খর্ব করতে এই বিশ্বস্ত অভিজাত গোষ্ঠী তৈরি করেন। এই ৪০ জন দাসকে উচ্চ সামরিক ও প্রশাসনিক পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর, এই চক্র এতটাই ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে যে তারা সুলতানদের নির্বাচন ও ক্ষমতাচ্যুতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে, এমনকি সুলতানা রাজিয়ার পতন ঘটাতেও তাদের হাত ছিল। তাদের অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা সাম্রাজ্যের অস্থিরতা বাড়িয়ে তোলে। অবশেষে, গিয়াসউদ্দিন বলবন, যিনি নিজেও একসময় এর সদস্য ছিলেন, এই চক্রের ক্ষমতাকে দমন করে তাদের নির্মূল করেন, কারণ তারা সুলতানের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
প্রশ্নঃ টীকা লেখ: সুলতান রাজিয়া
উত্তরঃ সুলতানা রাজিয়া (১২৩৬-১২৪০ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন দিল্লি সালতানাতের একমাত্র মহিলা শাসক এবং মামলুক বংশের অন্যতম শক্তিশালী সুলতান ইলতুৎমিশের কন্যা। ইলতুৎমিশ তার অযোগ্য পুত্রদের পরিবর্তে রাজিয়াকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেছিলেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাধা সত্ত্বেও, তার ভাই রুকনুদ্দিন ফিরোজ শাহের অযোগ্যতার পর জনগণের সমর্থনে রাজিয়া সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি পুরুষের পোশাক পরতেন এবং প্রকাশ্যে দরবারে আসতেন। রাজিয়া একজন সাহসী ও বিচক্ষণ শাসক ছিলেন; তিনি প্রশাসনকে সুসংহত করেন, বিদ্রোহ দমন করেন এবং আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। তবে, তার মহিলা হওয়া এবং একজন হাবশি ক্রীতদাস জামালউদ্দিন ইয়াকুতের প্রতি তার বিশেষ অনুগ্রহ তুর্কি অভিজাতদের, বিশেষ করে 'চল্লিশ চক্র'-এর অসন্তোষের কারণ হয়। আলতুনিয়ার বিদ্রোহের সময় তিনি পরাজিত ও বন্দী হন। পরে আলতুনিয়াকে বিবাহ করে সিংহাসন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলেও তিনি ব্যর্থ হন এবং ১২৪০ খ্রিস্টাব্দে নিহত হন।