ষষ্ঠ শ্রেণী
দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন
ইতিহাস
প্রশ্নের মান ৫ নং
১) মৌর্য শাসনব্যবস্থার প্রধান বিষয়গুলো উল্লেখ করো।
উত্তরঃ মৌর্য শাসনব্যবস্থার প্রধান বিষয়গুলো হলো নিম্নরূপঃ
* কেন্দ্রীভূত শাসন: সম্রাট ছিলেন সর্বময় কর্তা, যার হাতে ছিল শাসন, বিচার ও সামরিক ক্ষমতা।
* মন্ত্রিপরিষদ: সম্রাটকে সাহায্য করার জন্য একটি শক্তিশালী মন্ত্রিপরিষদ ছিল।
* প্রশাসনিক বিভাজন: সাম্রাজ্য প্রদেশ, জেলা এবং গ্রামে বিভক্ত ছিল, যেখানে বিভিন্ন স্তরের প্রশাসক নিযুক্ত ছিলেন।
* শক্তিশালী সেনাবাহিনী: পদাতিক, অশ্বারোহী, রথ ও হস্তী বাহিনী নিয়ে গঠিত একটি বিশাল ও সুসংগঠিত সেনাবাহিনী ছিল।
* দক্ষ গুপ্তচর ব্যবস্থা: সম্রাটের কাছে সরাসরি তথ্য সরবরাহ করার জন্য একটি ব্যাপক গুপ্তচর নেটওয়ার্ক ছিল।
* রাজস্ব আদায়: কৃষি, বাণিজ্য ও বিভিন্ন কর ছিল সরকারের আয়ের প্রধান উৎস।
* সুসংগঠিত বিচারব্যবস্থা: বিভিন্ন স্তরের আদালত ছিল এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হত।
* জনকল্যাণমূলক কাজ: জনস্বাস্থ্য, সেচ ব্যবস্থা ও রাস্তা নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হত।
* কঠোর আইন শৃঙ্খলা: অপরাধ দমনের জন্য কঠোর আইন ও দণ্ডবিধি প্রচলিত ছিল।
* অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ: রাষ্ট্র ব্যবসা-বাণিজ্য ও খনিজ সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখত।
২) বৈদিক সমাজ কটি ভাগে বিভক্ত ছিল এবং কেন?
উত্তরঃ চারটি ভাগে বিভক্ত: বৈদিক সমাজ মূলত চারটি প্রধান ভাগে (বর্ণে) বিভক্ত ছিল।
* বর্ণসমূহ: এই ভাগগুলি হলো - ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র।
* চতুর্বর্ণ প্রথা: এই বিভাজনকে চতুর্বর্ণ প্রথা বলা হয়।
* প্রাথমিক ভিত্তি: প্রাথমিকভাবে এই বিভাজন কর্মের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল।
* পরবর্তী পরিবর্তন: পরবর্তীতে এটি জন্মভিত্তিক হয়ে যায়।
* ব্রাহ্মণদের কাজ: ব্রাহ্মণরা ছিল সমাজের শিক্ষক ও পুরোহিত, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনা করত।
* ক্ষত্রিয়দের কাজ: ক্ষত্রিয়রা ছিল শাসক ও যোদ্ধা, রাজ্য রক্ষা ও শাসন করত।
* বৈশ্যদের কাজ: বৈশ্যরা ছিল ব্যবসায়ী, কৃষক ও পশুপালক, সমাজের অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করত।
* শূদ্রদের কাজ: শূদ্ররা ছিল সেবাকারী শ্রেণী, যারা উপরের তিন বর্ণের সেবা করত।
* উদ্দেশ্য: সমাজের শ্রম বিভাজন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখাই ছিল এই বিভাজনের মূল উদ্দেশ্য।
৩) মহাপঞ্চব্রত বলতে কী বোঝো ?
উত্তরঃ জৈন ধর্মের মূল নীতি: মহাপঞ্চব্রত হলো জৈন ধর্মের পাঁচটি মূল নৈতিক নীতি।
* কঠোরভাবে পালনীয়: এই ব্রতগুলি জৈন সাধু-সন্ন্যাসীদের জন্য অত্যন্ত কঠোরভাবে পালনীয়।
* প্রথম ব্রত: অহিংসা: কোনো জীবকে আঘাত না করা, যা জৈন ধর্মে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়।
* দ্বিতীয় ব্রত: সত্য: সর্বদা সত্য কথা বলা।
* তৃতীয় ব্রত: অস্তেয়: চুরি না করা বা অন্যের জিনিস অপহরণ না করা।
* চতুর্থ ব্রত: ব্রহ্মচর্য: ইন্দ্রিয় সংযম করা।
* পঞ্চম ব্রত: অপরিগ্রহ: অতিরিক্ত সম্পদ ও ভোগ সামগ্রী ত্যাগ করা বা সঞ্চয় না করা।
* মোক্ষ লাভের উপায়: এই ব্রতগুলি পালনের মাধ্যমে আত্মিক শুদ্ধি ও মোক্ষ লাভ করা যায় বলে জৈনরা বিশ্বাস করে।
* মহাবীরের শিক্ষা: মহাবীর এই পঞ্চব্রতকে জৈন ধর্মের মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
* অনুব্রত: গৃহস্থদের জন্য এগুলির কিছুটা শিথিল রূপ, অর্থাৎ 'অনুব্রত' পালনের কথা বলা হয়েছে।
* আধ্যাত্মিক উন্নতি: সম্মিলিতভাবে এই ব্রতগুলি মানুষকে জাগতিক বন্ধন থেকে মুক্ত করে নির্বাণ লাভের দিকে নিয়ে যায়।
৪) জৈন ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মে কি কি মিল ও অমিল দেখা যায় উল্লেখ কর।
উত্তর ঃ মিলসমূহ:
* বৈদিক বিরোধিতা: উভয় ধর্মই বৈদিক যাগযজ্ঞ ও জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতা করে।
* অহিংসা: দুটি ধর্মই অহিংসার উপর গুরুত্ব আরোপ করে।
* কর্মফল ও পুনর্জন্ম: উভয় ধর্মই কর্মফল ও পুনর্জন্মের ধারণায় বিশ্বাসী।
* মোক্ষ/নির্বাণ: উভয় ধর্মই আত্মিক শুদ্ধি ও মোক্ষ বা নির্বাণ লাভের পথ দেখায়।
* সংস্কারমূলক: উভয় ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ব্রাহ্মণ ধর্মের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।
অমিলসমূহ:
* অহিংসার কঠোরতা: জৈন ধর্ম অহিংসার উপর চূড়ান্ত গুরুত্ব দেয়, যা বৌদ্ধ ধর্মের চেয়েও কঠোর।
* তপস্যা বনাম মধ্যপন্থা: জৈন ধর্মে কঠিন তপস্যার মাধ্যমে মোক্ষ লাভের কথা বলা হয়েছে, যেখানে বৌদ্ধ ধর্ম মধ্যপন্থা অবলম্বনের কথা বলে।
* মোক্ষ লাভের পথ: বৌদ্ধ ধর্মে অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুসরণ করে নির্বাণ লাভের কথা বলা হয়েছে, যা জৈন ধর্মের পঞ্চব্রত থেকে ভিন্ন।
* ঈশ্বরের ধারণা: জৈন ধর্ম ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে নীরব থাকলেও, বৌদ্ধ ধর্ম ঈশ্বরের ধারণাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে।
* আত্মার ধারণা: জৈন ধর্মে আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস করা হয়, যেখানে বৌদ্ধ ধর্ম অনাত্মবাদ প্রচার করে।
৫) বৈদিক যুগের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর ঃ গুরুকেন্দ্রিক ও মৌখিক: শিক্ষাব্যবস্থা মূলত গুরুকেন্দ্রিক ছিল এবং জ্ঞান মৌখিকভাবে স্থানান্তরিত হত।
* গুরুগৃহ/আশ্রম: শিক্ষার্থীরা গুরুগৃহে (আশ্রম) গুরুর সান্নিধ্যে শিক্ষা লাভ করত।
* শিক্ষার উদ্দেশ্য: ধর্মীয় জ্ঞান, নৈতিক মূল্যবোধ ও ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন ছিল শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য।
* পাঠ্যক্রম: বেদের মন্ত্র, স্তোত্র ও অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ মুখস্থ করে শেখানো হত। গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র ও যুদ্ধবিদ্যাও শেখানো হত।
* শিক্ষার্থী সীমাবদ্ধতা: শিক্ষা মূলত উচ্চ বর্ণের পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, যদিও কিছু ক্ষেত্রে নারীদের শিক্ষার প্রমাণও পাওয়া যায়।
* গুরু-শিষ্য সম্পর্ক: গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত পবিত্র ও শ্রদ্ধাপূর্ণ।
* গুরুদক্ষিণা: গুরু কোনো বেতন নিতেন না, তবে শিষ্যরা গুরুর সেবা করত এবং শিক্ষা শেষে গুরুদক্ষিণা দিত।
* নৈর্ব্যক্তিকতা: এই ব্যবস্থা জ্ঞানকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে হস্তান্তরিত করতে সাহায্য করত।
* নৈতিক শিক্ষা: চরিত্র গঠন ও নৈতিক মূল্যবোধের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হত।
* ব্যবহারিক শিক্ষা: কৃষি, পশুপালন ও কারুশিল্পের মতো ব্যবহারিক বিষয়েও জ্ঞান প্রদান করা হত।
৬) মৌর্য সম্রাটরা গুপ্তচর কেন নিয়োগ করতেন?
উত্তরঃ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা: সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য গুপ্তচর নিয়োগ করা হত।
* তথ্য সংগ্রহ: গুপ্তচররা সরাসরি সম্রাটের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করত।
* প্রশাসনের নজরদারি: তারা স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকলাপ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিশ্বস্ততা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখত।
* আইন-শৃঙ্খলা: আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা এবং জনগণের অসন্তোষ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করত।
* শত্রু রাষ্ট্রের গতিবিধি: শত্রু রাষ্ট্রের গতিবিধি ও সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা দিত।
* বিদ্রোহ দমন: বিদ্রোহ দমন ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এই তথ্য সহায়ক ছিল।
* সুশাসন নিশ্চিতকরণ: এর মাধ্যমে সম্রাট সুশাসন নিশ্চিত করতেন এবং দুর্নীতির ওপর নজর রাখতেন।
* রাজকীয় নিয়ন্ত্রণ: বিশাল সাম্রাজ্যের উপর সম্রাটের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য গুপ্তচর ব্যবস্থা অপরিহার্য ছিল।
* আর্থিক অবস্থা: রাজস্ব আদায় এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সম্পর্কেও গুপ্তচররা তথ্য দিত।
* জনগণের মনোভাব: জনগণের মনোভাব ও প্রতিক্রিয়ার ওপর নজর রাখা হত, যাতে কোনো অসন্তোষ বড় আকার ধারণ না করে।
৭) নব্য ধর্ম আন্দোলন উদ্ভবের কারণ গুলি কি কি?
উত্তর ঃ ব্রাহ্মণ ধর্মের জটিলতা: বৈদিক যাগযজ্ঞের বাড়াবাড়ি, ব্যয়বহুলতা এবং পুরোহিত শ্রেণীর একচেটিয়া ক্ষমতা সাধারণ মানুষের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল।
* জাতিভেদ প্রথার কঠোরতা: সমাজে জাতিভেদ প্রথা অত্যন্ত কঠোর হয়ে উঠেছিল, যা নিম্নবর্ণের মানুষদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না।
* বৈশ্য ও শূদ্রদের আকাঙ্ক্ষা: কৃষি অর্থনীতির বিস্তার এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির ফলে বৈশ্য ও শূদ্রদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, যা প্রচলিত ব্যবস্থায় সম্ভব ছিল না।
* উপনিষদের প্রভাব: উপনিষদের দার্শনিক চিন্তাধারা নতুন ধর্মীয় দর্শনের জন্ম দিয়েছিল, যা প্রচলিত বৈদিক রীতিনীতির বাইরে ছিল।
* সংস্কারকদের আবির্ভাব: মহাবীর ও গৌতম বুদ্ধের মতো প্রভাবশালী সংস্কারকদের আবির্ভাব নতুন চিন্তা ও সরল জীবনধারার প্রচার করে আন্দোলনকে গতি দিয়েছিল।
* সংস্কৃত ভাষার আধিপত্য: ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও গ্রন্থগুলি সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য সংস্কৃত ভাষায় পরিচালিত হত।
* পশুবলি প্রথা: যাগযজ্ঞে অতিরিক্ত পশুবলির কারণে কৃষিক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছিল এবং অহিংসার প্রতি ঝোঁক বাড়ছিল।
* রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা: কিছু শাসক নতুন ধর্মগুলির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।
* অর্থনৈতিক পরিবর্তন: নগরকেন্দ্রিক অর্থনীতির বিকাশ নতুন সামাজিক শ্রেণী তৈরি করেছিল যাদের নতুন ধর্মীয় দর্শনের প্রয়োজন ছিল।
* সহজবোধ্যতা: নতুন ধর্মগুলির সরল নীতি ও প্রাকৃত ভাষায় প্রচার সাধারণ মানুষের কাছে সহজে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল।
৮) মেগালিথ সম্পর্কে টীকা লেখ।
উত্তর ঃ বৃহৎ প্রস্তর নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ: মেগালিথ হলো প্রাগৈতিহাসিক যুগের বৃহৎ পাথর দিয়ে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ বা স্থাপনা।
* শব্দের উৎপত্তি: 'মেগালিথ' শব্দটি গ্রীক শব্দ 'মেগাস' (বৃহৎ) এবং 'লিথোস' (পাথর) থেকে এসেছে।
* নির্মাণের উদ্দেশ্য: এগুলি সাধারণত সমাধি ক্ষেত্র, স্মারক বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নির্মিত হত।
* অবস্থান: ভারতে, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারত, দাক্ষিণাত্য মালভূমি এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে বিভিন্ন ধরনের মেগালিথিক কাঠামো পাওয়া গেছে।
* বিভিন্ন প্রকার: উল্লেখযোগ্য প্রকারগুলি হলো:
* ডলমেন: পাথরের কক্ষাকার সমাধি।
* সিস্ত: ভূগর্ভস্থ পাথরের কফিন।
* কাইরন: পাথরের স্তূপ।
* মেনহির: একক দণ্ডায়মান পাথর।
* সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: মেগালিথিক সংস্কৃতিতে মৃতদেহ সৎকার পদ্ধতি এবং পরকালের বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
* প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব: এই স্থাপনাগুলি প্রাচীন মানুষের স্থাপত্যিক জ্ঞান, কারিগরি দক্ষতা এবং সামাজিক-ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে।
* সময়কাল: প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এগুলির সময়কাল সাধারণত লোহ যুগ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
* সামাজিক সংগঠন: মেগালিথগুলি একটি সুসংগঠিত সমাজের ইঙ্গিত দেয়, যা এমন বৃহৎ কাঠামো তৈরি করতে সক্ষম ছিল।
৯) সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে মগদের সাফল্যের কারণ কি ছিল?
উত্তর ঃ অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান: মগধ উর্বর গাঙ্গেয় সমভূমিতে অবস্থিত ছিল, যা প্রচুর কৃষিজ উৎপাদন নিশ্চিত করত।
* প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা: এর রাজধানী পাটলিপুত্র জলবেষ্টিত থাকায় এবং গিরিব্রজ পাহাড় দ্বারা সুরক্ষিত থাকায় প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ছিল শক্তিশালী।
* খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য: মগধ অঞ্চলে লোহার খনি ছিল, যা উন্নত অস্ত্রশস্ত্র ও কৃষি সরঞ্জাম তৈরিতে সহায়ক হয়েছিল।
* বনজ সম্পদ: প্রচুর বনভূমি থেকে কাঠ এবং হাতি পাওয়া যেত, যা সামরিক কাজে ব্যবহৃত হত।
* শক্তিশালী শাসকদের আবির্ভাব: বিম্বিসার, অজাতশত্রু, মহাপদ্মনন্দ এবং চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও দক্ষ শাসকরা মগধের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
* সুসংগঠিত সেনাবাহিনী: মগধের ছিল একটি বিশাল ও সুসংগঠিত সেনাবাহিনী, যা সাম্রাজ্য বিস্তারে সহায়ক হয়েছিল।
* নতুন ধর্মের সমর্থন: বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের মতো নতুন ধর্মগুলির সমর্থন মগধের রাজাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছিল।
* অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি: কৃষি ও খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য মগধকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছিল।
* বাণিজ্যিক সুবিধা: নদীপথের মাধ্যমে বাণিজ্য সহজলভ্য হওয়ায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আরও বৃদ্ধি পায়।
* দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা: একটি সুসংগঠিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা সাম্রাজ্যকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করেছিল।
১০) ঋক বৈদিক যুগের অর্থনৈতিক অবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর ঃ পশুপালনভিত্তিক অর্থনীতি: ঋক বৈদিক যুগের অর্থনীতি ছিল মূলত পশুপালনভিত্তিক।
* গরু প্রধান সম্পদ: গরু ছিল সম্পদের প্রধান প্রতীক এবং সামাজিক মর্যাদার পরিচায়ক।
* কৃষির গুরুত্ব: কৃষি ছিল দ্বিতীয় প্রধান অর্থনৈতিক কার্যকলাপ, তবে পশুপালনের তুলনায় কম উন্নত ছিল।
* প্রধান ফসল: যব ছিল প্রধান ফসল।
* গ্রামীণ অর্থনীতি: গ্রামগুলি ছিল স্বায়ত্তশাসিত অর্থনৈতিক একক।
* বিনিময় প্রথা: দ্রব্য বিনিময় প্রথা প্রচলিত ছিল, মুদ্রার ব্যবহার সীমিত ছিল।
* কারুশিল্প: সূত্রধর, কুমোর, চর্মকার, বয়ন শিল্পী ইত্যাদি কারুশিল্পের প্রচলন ছিল।
* সীমিত বাণিজ্য: বাণিজ্য ছিল সীমিত এবং প্রধানত জলপথ ও স্থলপথে পরিচালিত হত।
* যুদ্ধের মাধ্যমে সম্পদ: যুদ্ধের মাধ্যমেও সম্পদ অর্জন করা হত, যেখানে গবাদি পশু লুট করা হত।
* কম অর্থনৈতিক বৈষম্য: সমাজ ছিল সরল এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য তুলনামূলকভাবে কম ছিল।
১১) শাসক হিসেবে হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা কর।
উত্তর ঃ রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপন: তিনি উত্তর ভারতের বিক্ষিপ্ত রাজ্যগুলিকে একত্রিত করে একটি বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
* সাম্রাজ্য বিস্তার: থানেশ্বর ও কনৌজের অধিপতি হিসেবে তিনি উত্তর ভারতে অনেক রাজ্য জয় করেন।
* সামরিক দক্ষতা: তিনি একজন দক্ষ সামরিক নেতা ছিলেন, যদিও চালুক্য রাজা দ্বিতীয় পুলকেশীর কাছে তার পরাজয় ঘটেছিল।
* সুশাসক: হর্ষ ছিলেন একজন প্রজাবৎসল ও দক্ষ শাসক, যিনি আইনশৃঙ্খলা ও জনগণের কল্যাণের দিকে বিশেষ নজর রাখতেন।
* অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি: তার শাসনকালে সাম্রাজ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় ছিল এবং অর্থনীতি বিকশিত হয়েছিল।
* সাহিত্য ও বিদ্যোৎসাহী: তিনি নিজে একজন কবি ও সাহিত্যিক ছিলেন এবং 'নাগানন্দ', 'রত্নাবলী', 'প্রিয়দর্শিকা' নামক নাটক রচনা করেন।
* বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা: তিনি বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং এর পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তিনি অনেক স্তূপ ও বিহার নির্মাণ করেন।
* চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি: তিনি কনৌজে এক বিশাল ধর্মীয় সমাবেশের আয়োজন করেন, যা চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি নামে পরিচিত।
* হিউয়েন সাং-এর বিবরণ: তার রাজত্বকালে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ভারতে আসেন এবং তার লেখায় হর্ষের সুশাসনের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।
* ধর্মীয় সহিষ্ণুতা: তিনি বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের প্রতিও সহনশীল ছিলেন।
১২) সাতবাহন শাসকদের শাসন পদ্ধতি আলোচনা কর।
উত্তর ঃ সুসংগঠিত শাসন: সাতবাহন শাসকদের শাসন পদ্ধতি ছিল সুসংগঠিত।
* রাজা ও মন্ত্রিপরিষদ: রাজা ছিলেন শাসন ব্যবস্থার প্রধান, এবং তাকে সাহায্য করার জন্য একটি মন্ত্রিপরিষদ ছিল।
* প্রশাসনিক বিভাজন: শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সাম্রাজ্যকে জনপদ ও গ্রামে বিভক্ত করা হয়েছিল।
* গ্রামের স্বায়ত্তশাসন: গ্রামগুলি ছিল স্বায়ত্তশাসিত এবং গ্রামিক বা গ্রামপ্রধান দ্বারা পরিচালিত হত।
* শক্তিশালী সামরিক বাহিনী: সাতবাহনরা একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী বজায় রেখেছিল।
* সামন্ত প্রথা: তারা সামন্ত প্রথা অনুসরণ করত, যেখানে স্থানীয় প্রধানরা রাজার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে নিজেদের অঞ্চলে শাসন করত।
* রাজস্ব আদায়: কৃষি ও বাণিজ্য থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ছিল সরকারের আয়ের প্রধান উৎস।
* ধর্মীয় পৃষ্ঠপোষকতা: সাতবাহনরা বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ উভয় ধর্মেরই পৃষ্ঠপোষকতা করত।
* বাণিজ্যিক গুরুত্ব: তারা পশ্চিম উপকূলে ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর বিশেষ জোর দিয়েছিল।
* অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি: তাদের শাসনকালে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনেছিল।
১৩) অশোকের ধম্ম বলতে কী বোঝো?
উত্তর ঃ নৈতিক আচরণবিধি: অশোকের ধম্ম ছিল সম্রাট অশোক প্রচারিত এক বিশেষ জীবনদর্শন ও নৈতিক আচরণবিধি।
* ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের বাইরে: এটি কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম ছিল না, বরং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পরিবর্তে মানবীয় মূল্যবোধের উপর গুরুত্ব দিত।
* সার্বজনীন নৈতিক বিধি: এটি ছিল একটি সার্বজনীন নৈতিক বিধি, যা সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য।
* অহিংসা: ধম্মের মূল নীতি ছিল অহিংসা (কোনো জীবকে হত্যা না করা বা আঘাত না করা)।
* সত্যবাদিতা ও সহনশীলতা: সত্যবাদিতা, সহনশীলতা (অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা) ধম্মের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
* দানশীলতা ও শ্রদ্ধা: দানশীলতা, পিতা-মাতা ও গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা, দাস ও ভৃত্যদের প্রতি সদ্ব্যবহার এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
* ধম্মমহামাত্র নিয়োগ: অশোক ধম্ম প্রচারের জন্য ধর্মমহামাত্র নামে কর্মচারী নিয়োগ করেছিলেন।
* শিলালিপি ও স্তম্ভলিপি: শিলালিপি ও স্তম্ভলিপির মাধ্যমে তার নীতিগুলি জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
* উদ্দেশ্য: সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও নৈতিকতার উন্নতি ঘটানোই ছিল ধম্মের মূল উদ্দেশ্য।
* আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও মুক্তি: এটি মানুষকে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে একটি উন্নত জীবন যাপনে এবং দুঃখ থেকে মুক্ত হতে উৎসাহিত করেছিল।
১৪) হর্ষচরিত কার রচনা ? এই গ্রন্থে কি আলোচনা করা হয়েছে?
উত্তর ঃ রচয়িতা: হর্ষচরিত রচনা করেছেন বাণভট্ট, যিনি ছিলেন সম্রাট হর্ষবর্ধনের সভাকবি।
* ঐতিহাসিক কাব্যগ্রন্থ: এটি সংস্কৃতে রচিত একটি ঐতিহাসিক কাব্যগ্রন্থ।
* প্রথম উল্লেখযোগ্য জীবনী: এটি হর্ষবর্ধনের জীবনীভিত্তিক প্রথম উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে অন্যতম।
* আলোচ্য বিষয়: এই গ্রন্থে মূলত সম্রাট হর্ষবর্ধনের জীবন, সামরিক অভিযান, রাজত্বকাল এবং তার সমসাময়িক সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
* দুটি প্রধান ভাগ: গ্রন্থটি দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত।
* প্রথম অংশ: প্রথম অংশে বাণভট্ট নিজের পরিবার ও জীবন সম্পর্কে লিখেছেন।
* দ্বিতীয় অংশ: দ্বিতীয় এবং প্রধান অংশে হর্ষবর্ধনের পূর্বপুরুষ, তার জন্ম, সিংহাসনে আরোহণ এবং তার বিভিন্ন সামরিক বিজয় ও প্রশাসনিক কার্যকলাপের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
* উল্লেখযোগ্য ঘটনা: এতে হর্ষের সামরিক সাফল্য, তার ভাই রাজ্যবর্ধনের হত্যা এবং কনৌজের সিংহাসন আরোহণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
* ঐতিহাসিক উৎস: এই গ্রন্থটি প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
* সাহিত্যিক গুণ: এটি শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক দলিল নয়, বরং এর সাহিত্যিক গুণও অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
১৫) মগধের উত্থানের কারণ গুলি আলোচনা করো।
উত্তর ঃ অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান: মগধ গাঙ্গেয় উপত্যকার উর্বর অঞ্চলে অবস্থিত ছিল, যা প্রচুর কৃষিজ উৎপাদন নিশ্চিত করত।
* প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা: এর রাজধানী পাটলিপুত্র জলবেষ্টিত এবং গিরিব্রজ পাহাড় দ্বারা সুরক্ষিত থাকায় প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ছিল শক্তিশালী।
* প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ: মগধ অঞ্চলে লোহার খনি ছিল, যা উন্নত কৃষি সরঞ্জাম এবং শক্তিশালী অস্ত্র তৈরিতে সহায়ক হয়েছিল।
* বনজ সম্পদ ও হাতি: প্রচুর বনভূমি থেকে পর্যাপ্ত কাঠ ও হাতি পাওয়া যেত, যা সামরিক কাজে ব্যবহৃত হত।
* শক্তিশালী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী শাসক: বিম্বিসার, অজাতশত্রু, মহাপদ্মনন্দ এবং চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মতো দক্ষ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী শাসকরা মগধের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
* সুসংগঠিত সেনাবাহিনী: মগধের ছিল একটি বিশাল ও সুসংগঠিত সেনাবাহিনী, যা সাম্রাজ্য বিস্তারে সহায়ক হয়েছিল।
* নতুন ধর্মের সমর্থন: বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের মতো নতুন ধর্মগুলি জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতা করে সাধারণ মানুষের সমর্থন লাভ করেছিল এবং মগধের শাসকদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছিল।
* অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি: কৃষি ও খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য মগধকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছিল।
* বাণিজ্যিক সুবিধা: নদীপথের মাধ্যমে বাণিজ্য সহজলভ্য হওয়ায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আরও বৃদ্ধি পায়।
* দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা: একটি সুসংগঠিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা সাম্রাজ্যকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করেছিল।
১৬) বৌদ্ধ ধর্মের মূল নীতিগুলি আলোচনা কর।
উত্তরঃ চার আর্য সত্য: বৌদ্ধ ধর্মের প্রধান ভিত্তি হলো চার আর্য সত্য।
* দুঃখ আছে (সংসার দুঃখময়)।
* দুঃখের কারণ আছে (তৃষ্ণা বা কামনা)।
* দুঃখ নিরোধ করা সম্ভব (তৃষ্ণা নিবৃত্তি)।
* দুঃখ নিরোধের পথ আছে (অষ্টাঙ্গিক মার্গ)।
* অষ্টাঙ্গিক মার্গ: দুঃখ নিরোধের এই পথই হলো অষ্টাঙ্গিক মার্গ, যা আটটি নীতির সমষ্টি:
* সৎ বাক্য (সঠিক কথা বলা)
* সৎ কর্ম (সঠিক কাজ করা)
* সৎ জীবনযাপন (সঠিক জীবিকা নির্বাহ)
* সৎ প্রচেষ্টা (সঠিক চেষ্টা)
* সৎ স্মৃতি (সঠিক স্মৃতি)
* সৎ সমাধি (সঠিক ধ্যান)
* সৎ সংকল্প (সঠিক সংকল্প)
* সৎ দৃষ্টি (সঠিক জ্ঞান)
* অহিংসা: বৌদ্ধ ধর্ম অহিংসা এবং সকল প্রাণীর প্রতি দয়ার উপর গুরুত্ব দেয়।
* মধ্যপন্থা: এটি মধ্যপন্থা অবলম্বনের কথা বলে, অর্থাৎ অতিরিক্ত ভোগ বা কঠোর তপস্যা উভয়ই পরিহার করা।
* কর্মফল ও পুনর্জন্ম: বৌদ্ধ ধর্ম কর্মফল ও পুনর্জন্মের ধারণায় বিশ্বাসী।
* জাতিভেদহীনতা: বৌদ্ধ ধর্ম জাতিভেদ প্রথাকে অস্বীকার করে এবং সকল মানুষের সমতার উপর জোর দেয়।
* নির্বাণ লাভ: এর মূল লক্ষ্য হলো নির্বাণ লাভ, যা সকল দুঃখ ও বন্ধন থেকে মুক্তি।
* অনাত্মবাদ: বৌদ্ধ ধর্ম আত্মার স্থায়ী অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না (অনাত্মবাদ)।
* ঈশ্বরের ধারণা বর্জন: বৌদ্ধ ধর্ম ঈশ্বরের ধারণাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে।
* ত্যাগ ও সংযম: জাগতিক আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ ও ইন্দ্রিয় সংযমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
১৭) সমুদ্রগুপ্তের কৃতিত্ব আলোচনা কর।
উত্তর ঃ মহাপরাক্রমশালী শাসক: সমুদ্রগুপ্ত (৩৩৫-৩৭৫ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও পরাক্রমশালী শাসক।
* ভারতের নেপোলিয়ন: ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ তাকে 'ভারতের নেপোলিয়ন' আখ্যা দেন।
* সামরিক বিজয় (আর্যাবর্ত): তিনি উত্তর ভারতের (আর্যাবর্ত) নয়জন রাজাকে পরাজিত করে নিজ সাম্রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন।
* সামরিক বিজয় (দক্ষিণাপথ): তিনি দক্ষিণ ভারতের ১২ জন রাজাকে পরাজিত করে তাদের করদ রাজ্যে পরিণত করেন।
* এলাহাবাদ স্তম্ভলিপি: তার সামরিক অভিযানগুলি কবি হরিষেণ কর্তৃক রচিত এলাহাবাদ স্তম্ভলিপিতে বিশদভাবে বর্ণিত আছে।
* সাম্রাজ্য বিস্তার ও সুসংহতকরণ: তিনি তার বিজিত অঞ্চলগুলিকে একত্রিত করে একটি বিশাল ও শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।
* সুশাসন: সমুদ্রগুপ্ত একজন দক্ষ প্রশাসক ছিলেন এবং তার শাসনকালে সাম্রাজ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় ছিল।
* শিল্প ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা: তিনি নিজে একজন কবি, সঙ্গীতজ্ঞ এবং বিদ্যোৎসাহী ছিলেন।
* মুদ্রায় বীণা: তার মুদ্রায় তাকে বীণা বাজাতে দেখা যায়, যা তার সঙ্গীতানুরাগের প্রমাণ।
* ধর্মীয় সহিষ্ণুতা: যদিও তিনি ছিলেন একজন হিন্দু, তবুও তিনি অন্যান্য ধর্মের প্রতি সহনশীল ছিলেন।
১৮) আদি বৈদিক সমাজ ও পরবর্তী বৈদিক সমাজে নারীদের অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তরঃ আদি বৈদিক সমাজে নারীদের অবস্থা:
* উন্নত মর্যাদা: আদি বৈদিক যুগে (ঋক বৈদিক যুগ) নারীদের অবস্থা তুলনামূলকভাবে উন্নত ছিল।
* শিক্ষার সুযোগ: তারা শিক্ষা লাভের সুযোগ পেত এবং বেদ অধ্যয়ন করতে পারত।
* বিদুষী নারী: ঘোষা, লোপামুদ্রা, অপালা, বিশ্ববারার মতো বিদুষী নারীরা বেদের মন্ত্র রচনায় অংশ নিয়েছিলেন।
* ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ: সমাজে নারীর যথেষ্ট মর্যাদা ছিল এবং তারা পুরুষদের সাথে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারত।
* স্বয়ম্বর প্রথা: বিবাহের ক্ষেত্রে স্বয়ম্বর প্রথা প্রচলিত ছিল, যেখানে নারীরা নিজেদের স্বামী বেছে নিতে পারত।
* বাল্যবিবাহের অনুপস্থিতি: বাল্যবিবাহ বা সতীদাহ প্রথার তেমন প্রচলন ছিল না।
* বিধবা বিবাহ: বিধবা বিবাহ প্রচলিত ছিল, যাকে 'নিয়োগ প্রথা' বলা হত।
* সীমিত স্বাধীনতা: সমাজে তাদের যথেষ্ট স্বাধীনতা ছিল এবং তারা পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
* সম্পত্তির অধিকার: কিছু ক্ষেত্রে নারীর সীমিত সম্পত্তির অধিকার ছিল।
* একপত্নীত্ব: যদিও বহুবিবাহের প্রচলন ছিল, একপত্নীত্বই বেশি প্রচলিত ছিল।
পরবর্তী বৈদিক সমাজে নারীদের অবস্থা:
* অবস্থা অবনতি: পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীদের অবস্থার লক্ষণীয় অবনতি হয়।
* শিক্ষার সুযোগ সংকোচন: শিক্ষার সুযোগ সংকুচিত হতে থাকে এবং তাদের গৃহস্থালীর কাজে সীমাবদ্ধ করা হয়।
* ধর্মীয় অংশগ্রহণ সীমিত: ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে যায় এবং তারা পুরুষের সাথে যজ্ঞে বসতে পারত না।
* পিতৃতান্ত্রিক সমাজ: সমাজে পিতৃতান্ত্রিক প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষতান্ত্রিক রীতিনীতি প্রাধান্য পায়।
* বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ: বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের প্রচলন বাড়ে।
* সতীদাহের সূচনা: যদিও ব্যাপক ছিল না, সতীদাহ প্রথার কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
* বিধবা বিবাহ নিষিদ্ধ: বিধবা বিবাহ ক্রমশ নিষিদ্ধ হতে শুরু করে।
* সম্পত্তির অধিকার হ্রাস: নারীদের সম্পত্তির লাভের অধিকার কমে যায় এবং তারা পুরুষদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
* পর্দা প্রথার সূচনা: কিছু ক্ষেত্রে পর্দা প্রথার প্রচলন শুরু হয়।
* সামাজিক সীমাবদ্ধতা: তাদের সামাজিক স্বাধীনতা কমে যায় এবং তাদের সমাজের বিভিন্ন কার্যকলাপ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়।
১৯) কুষাণ সম্রাট কনিষ্কের কৃতিত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর ঃ কুষাণ সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ শাসক: কনিষ্ক (১ম বা ২য় খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন কুষাণ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত ও প্রভাবশালী শাসক।
* সাম্রাজ্য বিস্তার: তিনি একটি বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন, যা মধ্য এশিয়া থেকে উত্তর ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
* রাজধানী: তার সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল পেশোয়ার (পুরুষপুর)।
* বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা: কনিষ্ক ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের একজন মহান পৃষ্ঠপোষক।
* চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি: তিনি কাশ্মীরে চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতির আয়োজন করেন, যেখানে বৌদ্ধ ধর্মের মহাযান শাখার বিকাশ ঘটে।
* স্তূপ ও বিহার নির্মাণ: তিনি অসংখ্য স্তূপ ও বিহার নির্মাণ করেন।
* বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার: তার প্রচেষ্টায় বৌদ্ধ ধর্ম চীন, মধ্য এশিয়া এবং তিব্বতে ছড়িয়ে পড়ে।
* শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নতি: তার রাজত্বকালে গান্ধার শিল্পশৈলী বিকশিত হয়, যা গ্রিকো-রোমান ও ভারতীয় শিল্পের সংমিশ্রণ।
* শিক্ষিত রাজসভা: তার রাজসভায় অশ্বঘোষ (কবি), চরক (চিকিৎসক) এবং নাগার্জুন (দার্শনিক) এর মতো অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
* বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি: কনিষ্কের সাম্রাজ্য রেশম পথের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে অবস্থিত ছিল, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসারে সহায়ক হয়েছিল।