ষষ্ঠ শ্রেণি
ভূগোল
দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন
(প্রশ্নের মান ৫ নং) ৫×২=১০
জল-স্থল-বাতাস
১) পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস করো। বা, বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলো সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে প্রধানত পাঁচটি স্তরে ভাগ করা যায়। স্তরগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার ক্রমানুসারে নিচে আলোচনা করা হলো:
ক) ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere): এটি বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নিচের স্তর। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ০-১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্তরেই মেঘ, বৃষ্টি, ঝড়, বাতাস, তাপপ্রবাহ ইত্যাদি আবহাওয়ার বিভিন্ন phenomena দেখা যায়। উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই স্তরে তাপমাত্রা কমতে থাকে। জীবজগতের জন্য এই স্তরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
খ) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (Stratosphere): ট্রপোস্ফিয়ারের উপরে প্রায় ১৮-৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত। এই স্তরে তাপমাত্রা উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে থাকে। এই স্তরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ওজোন স্তর (Ozone Layer)। এই ওজোন স্তর সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে জীবজগতকে রক্ষা করে।
গ) মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere): স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উপরে প্রায় ৫০-৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত। এটি বায়ুমণ্ডলের শীতলতম স্তর। উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই স্তরে তাপমাত্রা দ্রুত কমতে থাকে। মহাকাশ থেকে আসা উল্কা এই স্তরে প্রবেশ করার পর প্রায়শই পুড়ে যায়।
ঘ) থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere): মেসোস্ফিয়ারের উপরে প্রায় ৮০-৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত। এই স্তরে তাপমাত্রা উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। এখানে বায়ুর কণাগুলো খুবই হালকা থাকে। এই স্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আয়নোস্ফিয়ার (Ionosphere), যা বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত করতে সাহায্য করে।
ঙ) এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere): থার্মোস্ফিয়ারের উপরে ৫০০ কিলোমিটারের পর থেকে প্রায় অসীম পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত। এটি বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে বাইরের স্তর। এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব খুবই কম এবং ধীরে ধীরে তা মহাশূন্যে মিশে যায়। কৃত্রিম উপগ্রহ এবং মহাকাশ স্টেশনগুলো এই স্তরেই স্থাপন করা হয়।
২) পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলো চিত্রসহ নামকরণ করো।
উত্তর : মহাশূন্য
↑
এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere)
↑
থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere)
↑
মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere)
↑
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (Stratosphere)
(ওজোন স্তর)
↑
ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere)
↑
ভূপৃষ্ঠ
৩) চিত্রসহ জলচক্র পদ্ধতি সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : জলচক্র একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পৃথিবীর জল বিভিন্ন রূপে (তরল, গ্যাসীয় ও কঠিন) ভূপৃষ্ঠ, বায়ুমণ্ডল এবং ভূগর্ভের মধ্যে চক্রাকারে আবর্তিত হয়। নিচে চিত্রসহ এই পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:
মেঘ (Cloud)
↑↓
বৃষ্টি/তুষারপাত (Precipitation)
↓
ভূপৃষ্ঠের জল (Surface Water)
(নদী, পুকুর, হ্রদ, সমুদ্র)
↓↑
বাষ্পীভবন (Evaporation) প্রশ্বাস (Transpiration)
↑
জলীয় বাষ্প (Water Vapor)
↑
ঘনীভবন (Condensation)
পদ্ধতি:
ক) বাষ্পীভবন (Evaporation): সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠের জল (যেমন নদী, পুকুর, সমুদ্র) জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়ে বায়ুমণ্ডলে মেশে।
খ) প্রশ্বাস (Transpiration): উদ্ভিদ তাদের পাতা থেকে জলীয় বাষ্প বাতাসে ছাড়ে, এটিও জলচক্রের একটি অংশ।
গ) ঘনীভবন (Condensation): বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প উপরে উঠে ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এসে ছোট ছোট জলকণায় বা বরফকণায় পরিণত হয়। এই জলকণা বা বরফকণা একত্রিত হয়ে মেঘ তৈরি করে।
ঘ) বৃষ্টি/তুষারপাত (Precipitation): মেঘে জলকণা বা বরফকণা আকারে বড় হলে তা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বৃষ্টি, তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদির রূপে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে।
ঙ) ভূপৃষ্ঠের জল (Surface Water): ভূপৃষ্ঠে পতিত জল নদী, নালা, পুকুর, হ্রদ, সমুদ্রে জমা হয়। এই জলের কিছু অংশ ভূগর্ভে প্রবেশ করে (অনুপ্রবেশ - Infiltration)। ভূপৃষ্ঠের জল আবার সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়ে জলচক্রটিকে সচল রাখে।
৪) বায়ুমণ্ডলের প্রয়োজনীয়তাগুলি লেখ।
উত্তর : বায়ুমণ্ডল আমাদের জন্য অপরিহার্য। এর প্রধান প্রয়োজনীয়তাগুলি হলো:
ক) শ্বাসকার্যের জন্য অক্সিজেন: বায়ুমণ্ডলে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন (প্রায় ২১%) রয়েছে যা মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তুর শ্বাসকার্যের জন্য অত্যাবশ্যক।
খ) কার্বন ডাই অক্সাইডের সরবরাহ: উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির জন্য (সালোকসংশ্লেষ) প্রয়োজনীয় কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমণ্ডলেই মজুত রয়েছে।
গ) তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ: বায়ুমণ্ডল একটি প্রাকৃতিক কম্বলের মতো কাজ করে। এটি দিনের বেলায় সূর্যের অতিরিক্ত তাপ থেকে আমাদের রক্ষা করে এবং রাতের বেলায় ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচায়।
ঘ) ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা: বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে জীবজগতকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
ঙ) আবহাওয়ার সৃষ্টি: বৃষ্টি, ঝড়, বাতাস, মেঘ ইত্যাদি বায়ুমণ্ডলেই তৈরি হয় যা আমাদের জীবনযাত্রার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চ) বেতার তরঙ্গ প্রেরণ: বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার বেতার তরঙ্গকে প্রতিফলিত করে দূরবর্তী স্থানে যোগাযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে।
৫) ওজোন স্তর ক্ষয় হওয়ার কারণ কী? এর ফল কী হতে পারে?
উত্তর : ওজোন স্তর ক্ষয় হওয়ার কারণ:
ক) ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC): রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, অ্যারোসল স্প্রে এবং ফোম তৈরিতে ব্যবহৃত ক্লোরোফ্লুরোকার্বন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে মিশে ওজোন স্তরের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ওজোনের অণুকে ভেঙে দেয়।
খ) হ্যালোজেন যৌগ (Halogen Compounds): অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রে ব্যবহৃত হ্যালোজেন যৌগ এবং কীটনাশক থেকেও ওজোন স্তরের ক্ষতি হয়।
গ) নাইট্রোজেন অক্সাইড (Nitrogen Oxides): জেট বিমান থেকে নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং জীবাশ্ম জ্বালানির দহনের ফলে উৎপন্ন নাইট্রোজেন অক্সাইড ওজোন স্তরের ক্ষয়ের কারণ হতে পারে।
ওজোন স্তর ক্ষয়ের ফল:
ক) ত্বকের ক্যান্সার বৃদ্ধি: ওজোন স্তর ক্ষয় হওয়ার ফলে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়, যা মানুষের মধ্যে ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
খ) চোখের ক্ষতি: অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে চোখের ছানি পড়া এবং অন্যান্য চোখের রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।
গ) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস: এই রশ্মি মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে।
ঘ) কৃষি উৎপাদন হ্রাস: অতিবেগুনি রশ্মি উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে, ফলে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কম হতে পারে।
ঙ) সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি: এটি সমুদ্রের ছোট ছোট উদ্ভিদ ও প্রাণীদের (যেমন প্ল্যাঙ্কটন) ক্ষতি করে, যা খাদ্য শৃঙ্খলকে প্রভাবিত করে।
চ) জলবায়ুর পরিবর্তন: ওজোন স্তর ক্ষয় পরোক্ষভাবে পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখতে পারে।
৬) ' মানুষের কিছু কাজকর্ম পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে।'-- এই উক্তিটি সম্পর্কে তোমার মতামত দাও।
উত্তর : এই উক্তিটি সম্পূর্ণ সত্য। মানুষের কিছু কার্যকলাপ সত্যিই পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো:
ক) বনভূমি ধ্বংস: মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস করছে। এর ফলে একদিকে যেমন গাছপালা ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে, তেমনি মাটি ক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমছে।
খ) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার: কয়লা, পেট্রোলিয়াম, ডিজেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। এর ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং অ্যাসিড বৃষ্টির মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
গ) শিল্প দূষণ: কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, রাসায়নিক বর্জ্য এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ বায়ু, জল ও মাটিকে দূষিত করছে। এর ফলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে এবং মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটছে।
ঘ) প্লাস্টিকের ব্যবহার: যত্রতত্র প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। প্লাস্টিক সহজে পচে না এবং মাটি ও জলকে দূষিত করে।
ঙ) কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার: কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ফলে মাটি ও জল দূষিত হচ্ছে এবং খাদ্য শৃঙ্খলে বিষ প্রবেশ করছে।
চ) জনসংখ্যা বৃদ্ধি: অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চরম চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। খাদ্য, জল, বাসস্থান এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা পূরণের জন্য পরিবেশের উপর অতিরিক্ত শোষণ চলছে।
এই সমস্ত কার্যকলাপের ফলে পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং এর বিরূপ প্রভাব জীবজগতের উপর পড়ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন করা অত্যন্ত জরুরি।
৭) বিশ্ব উষ্ণায়ন কীভাবে ঘটে তা সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর : বিশ্ব উষ্ণায়ন হলো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়া। এর প্রধান কারণ হলো গ্রিনহাউস গ্যাসের আধিক্য।
সূর্য থেকে আসা আলোকরশ্মি ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে। এই তাপের কিছু অংশ বিকিরিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়। কিন্তু বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂), মিথেন (CH₄), নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O), জলীয় বাষ্প (H₂O) এবং অন্যান্য কিছু গ্যাস (যাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলা হয়) এই বিকিরিত তাপের কিছু অংশ শোষণ করে এবং পুনরায় ভূপৃষ্ঠের দিকে ফেরত পাঠায়। এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াটি গ্রিনহাউস প্রভাব নামে পরিচিত এবং এটি পৃথিবীকে উষ্ণ রাখে।
তবে, মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রধান কারণগুলি হলো:
ক) জীবাশ্ম জ্বালানির দহন: বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন এবং শিল্পকারখানায় কয়লা, পেট্রোলিয়াম, ডিজেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে মেশে।
খ) বনভূমি ধ্বংস: গাছপালা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। বনভূমি ধ্বংসের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
গ) কৃষিকাজ ও গবাদি পশু পালন: ধান চাষ এবং গবাদি পশুর হজম প্রক্রিয়া থেকে মিথেন গ্যাস নির্গত হয়।
ঘ) শিল্প প্রক্রিয়া: কিছু শিল্প প্রক্রিয়া থেকেও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়।
বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপ ভূপৃষ্ঠে আটকা পড়ে, যার কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এটাই বিশ্ব উষ্ণায়ন নামে পরিচিত।
(প্রশ্নের মান ৩ নং) ৩×৪=১২
বরফে ঢাকা মহাদেশ, ভারতের জলবায়ু
১) আন্টার্কটিকা অভিযান করতে গেলে তুমি বছরের কোন মাস বেছে নেবে এবং কেন?
উত্তর: আন্টার্কটিকা অভিযানের জন্য আমি নভেম্বরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারির শুরু পর্যন্ত সময়কাল বেছে নেব। এর প্রধান কারণগুলি হল:
ক) দীর্ঘতম দিনের আলো: এই সময়কালে আন্টার্কটিকায় গ্রীষ্মকাল থাকে এবং দিনের আলোর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। এর ফলে অভিযান পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় এবং কাজ করা সহজ হয়।
খ) উষ্ণতম তাপমাত্রা: আন্টার্কটিকার গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে উষ্ণ থাকে (যদিও তা হিমাঙ্কের কাছে বা সামান্য উপরে থাকতে পারে)। বরফ এবং তুষারের তীব্রতা কিছুটা কম থাকায় চলাচল এবং গবেষণা কাজ সহজ হয়।
গ) সমুদ্রের বরফ হ্রাস: গ্রীষ্মকালে আন্টার্কটিকার উপকূলীয় অঞ্চলের সমুদ্রের বরফ (sea ice) ভেঙে যায় বা হ্রাস পায়। এর ফলে জাহাজ চলাচল এবং উপকূলের কাছাকাছি অবতরণ করা সহজ হয়।
২) বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে কীভাবে পৃথিবীর শীতলতম স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ?
উত্তর: বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর শীতলতম স্থান অর্থাৎ মেরু অঞ্চল (বিশেষত আন্টার্কটিকা ও সুমেরু) মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর প্রধান প্রভাবগুলি হল:
ক) বরফ গলন: বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে মেরু অঞ্চলের বরফ এবং হিমবাহ দ্রুত হারে গলছে। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উপকূলবর্তী অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে।
খ) জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি: মেরু অঞ্চলের বিশেষত পেঙ্গুইন, মেরু ভল্লুক এবং অন্যান্য ঠান্ডা-সহিষ্ণু প্রাণীরা তাদের বাসস্থান হারাচ্ছে এবং খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতেও পড়ছে।
গ) পরিবর্তিত আবহাওয়া: মেরু অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় আবহাওয়ার ধরণে পরিবর্তন আসছে। ঝড়, তুষারঝড় এবং অন্যান্য চরম আবহাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘ) সমুদ্র স্রোতের পরিবর্তন: মেরু অঞ্চলের বরফ গলা জল সমুদ্রের লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রার ভারসাম্য পরিবর্তন করতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী সমুদ্র স্রোতের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
৩) ভারতে শীতকাল শুষ্ক প্রকৃতির হয় কেন?
উত্তর: ভারতে শীতকাল শুষ্ক প্রকৃতির হওয়ার প্রধান কারণ হল উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু। শীতকালে স্থলভাগ দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় উত্তর-পশ্চিম ভারতে উচ্চচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এই উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে শীতল ও শুষ্ক বায়ু দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু স্থলভাগ থেকে আসে বলে এতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুবই কম থাকে। ফলে এই বায়ুপ্রবাহের কারণে ভারতে শীতকালে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে।
৪) ভারতীয় জলবায়ুর তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর: ভারতীয় জলবায়ুর তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল:
ক) মৌসুমী প্রভাব: ভারতীয় জলবায়ুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের প্রভাব। গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আগত শুষ্ক ও শীতল বায়ু আবহাওয়া শুষ্ক রাখে।
খ) বৈচিত্র্যপূর্ণ তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত: ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণে ব্যাপক বৈচিত্র্য দেখা যায়। মরু অঞ্চলে চরম উষ্ণতা ও স্বল্প বৃষ্টিপাত দেখা যায়, আবার উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও মাঝারি তাপমাত্রা থাকে।
গ) ঋতু পরিবর্তন: ভারতে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত এই চারটি প্রধান ঋতু স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়। এই ঋতুগুলির আগমন ও স্থায়িত্ব ভারতীয় জনজীবন ও কৃষিকাজের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।
৫) দক্ষিণ - পশ্চিম মৌসুমীবায়ু ও উত্তর - পূর্ব মৌসুমীবায়ুর মধ্যে জলবায়ুগত তিনটি পার্থক্য লেখ।
উত্তর: বৈশিষ্ট্য | দক্ষিণ - পশ্চিম মৌসুমীবায়ু | উত্তর - পূর্ব মৌসুমীবায়ু |
ক) প্রবাহের দিক | আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর থেকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের দিকে প্রবাহিত হয়। | ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। |
খ) সময়কাল | গ্রীষ্মকালের শুরুতে (জুন মাস থেকে) বর্ষাকাল জুড়ে প্রবাহিত হয়। | শীতকালে (অক্টোবর মাস থেকে) শীতকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। |
গ) বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি | এই বায়ুপ্রবাহের ফলে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। | এই বায়ু সাধারণত শুষ্ক প্রকৃতির হয় এবং ভারতে তেমন বৃষ্টিপাত ঘটায় না। তবে বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে আসার সময় আর্দ্রতা গ্রহণ করে তামিলনাড়ুর উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটায়। |
৬) ভারতের ঋতু বৈচিত্র্যের পরিচয় দাও।
উত্তর: ভারতে প্রধানত চারটি ঋতু দেখা যায়:
ক) গ্রীষ্মকাল (মার্চ থেকে মে): এই সময়কালে তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং দেশের উত্তর ও মধ্য অংশে তীব্র গরম অনুভূত হয়। দিনের বেলা লু নামক উষ্ণ ও শুষ্ক বাতাস বয়।
খ) বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর): দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই সময়কালে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। দেশের কৃষিপ্রধান অঞ্চলের জন্য এই ঋতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গ) শরৎকাল (অক্টোবর ও নভেম্বর): বর্ষা বিদায় নেওয়ার পর আবহাওয়া ধীরে ধীরে মনোরম হতে শুরু করে। তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং আকাশ সাধারণত পরিষ্কার থাকে।
ঘ) শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি): উত্তর ভারতে এই সময়কালে তাপমাত্রা বেশ কমে যায় এবং শীত অনুভূত হয়। পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাতও দেখা যায়। দক্ষিণ ভারতে অবশ্য শীতের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
এই চারটি প্রধান ঋতুর পাশাপাশি কোথাও কোথাও স্বল্প সময়ের জন্য বসন্ত ঋতুও অনুভূত হয়। ভারতের এই ঋতু বৈচিত্র্য এখানকার জীববৈচিত্র্য, কৃষি এবং মানুষের জীবনযাত্রার উপর গভীর প্রভাব ফেলে।
৭) উদাহরণসহ ভারতে নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য ও লবণাম্বু অরণ্যের উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলো লেখো।
উত্তর: উদাহরণসহ ভারতে নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য ও লবণাম্বু অরণ্যের উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য:
ক) নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য:
{ অবস্থান: এই প্রকার অরণ্য সাধারণত পার্বত্য অঞ্চলের উচ্চতায় (যেমন হিমালয়ের পার্বত্য ঢালে, পশ্চিমঘাট পর্বতের কিছু অংশে) এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু অঞ্চলে দেখা যায়, যেখানে তাপমাত্রা মাঝারি এবং বৃষ্টিপাত যথেষ্ট।}
বৈশিষ্ট্য:
১) এই অরণ্যের গাছগুলি লম্বা ও ঘন হয় এবং এদের পাতা চওড়া হয়।
২) বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা একসাথে জন্মায় (মিশ্র অরণ্য)।
৩) কাঠ সাধারণত শক্ত ও মূল্যবান হয়।
৪) এখানে পর্ণমোচী এবং চিরসবুজ উভয় প্রকার গাছই দেখা যায়।
উদাহরণ: শাল (Shorea robusta), সেগুন (Tectona grandis), ওক (Quercus spp.), ম্যাপেল (Acer spp.), পাইন (Pinus spp.), ফার (Abies spp.) ইত্যাদি।
খ) লবণাম্বু অরণ্য (ম্যানগ্রোভ):
{ অবস্থান: এই প্রকার অরণ্য উপকূলবর্তী অঞ্চলে, বিশেষত নদীর মোহনা এবং জোয়ার-ভাটার এলাকায় দেখা যায়, যেখানে মাটি লবণাক্ত এবং কর্দমাক্ত থাকে।}
বৈশিষ্ট্য:
১) এই গাছের শ্বাসমূল (pneumatophores) থাকে, যা মাটির উপরে উঠে বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে।
২) এদের ঠেসমূল (stilt roots) থাকে, যা গাছকে কর্দমাক্ত মাটিতে স্থির থাকতে সাহায্য করে।
৩) এরা লবণাক্ত পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য বিশেষ অভিযোজন দেখায়।
৪) বীজ গাছে থাকা অবস্থাতেই অঙ্কুরিত হয় (vivipary)।
উদাহরণ: সুন্দরী (Heritiera fomes), গড়ান (Ceriops tagal), গেঁওয়া (Excoecaria agallocha), কেওড়া (Sonneratia apetala) ইত্যাদি।
৮) ভারতে মৌসুমী জলবায়ুর প্রভাবগুলি লেখো।
উত্তর: ভারতে মৌসুমী জলবায়ুর প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক ও বহুমুখী। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব নিচে উল্লেখ করা হল:
ক) কৃষি: ভারতের কৃষি প্রধানত মৌসুমী বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। বর্ষাকালে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে ফসল ভালো হয় এবং খাদ্য নিরাপত্তা বজায় থাকে। অনিয়মিত বা অপর্যাপ্ত বৃষ্টি খরা ও ফসলের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
খ) অর্থনীতি: কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় ভারতের অর্থনীতিও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৌসুমী জলবায়ুর দ্বারা প্রভাবিত হয়। কৃষিপণ্যের উৎপাদন, পরিবহন, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই মৌসুমের উপর নির্ভর করে।
গ) জনজীবন: মৌসুমী বায়ু মানুষের জীবনযাত্রার উপর গভীর প্রভাব ফেলে। গ্রীষ্মের তীব্র গরমের পর বর্ষার আগমন স্বস্তি নিয়ে আসে। তবে অতিবৃষ্টি বা বন্যার কারণে জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতিও হতে পারে। শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়া মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মকে প্রভাবিত করে।
ঘ) প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য: মৌসুমী বায়ু ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিকাশে সাহায্য করে। বৃষ্টিপাতের ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন প্রকার বনভূমি (যেমন - চিরসবুজ অরণ্য, পর্ণমোচী অরণ্য, মরুভূমি) সৃষ্টি হয়েছে।
ঙ) জল সরবরাহ: মৌসুমী বৃষ্টিপাত ভারতের নদ-নদী, জলাশয় এবং ভূগর্ভস্থ জলের প্রধান উৎস। এই জল কৃষিকাজ, শিল্প এবং পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করে।
চ) সাংস্কৃতিক প্রভাব: ভারতের সংস্কৃতি, উৎসব এবং জীবনযাত্রার অনেক দিক মৌসুমী ঋতুর সাথে সম্পর্কিত। বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদন এবং উৎসব পালন করা হয়।
মোটকথা, মৌসুমী জলবায়ু ভারতের জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাকি প্রশ্নোত্তর শীঘ্রই আসছে