1) মানব হৃদপিন্ডের একটি চিত্র অঙ্কন করে নিম্নলিখিত অংশগুলি চিহ্নিত করো-
ক) বাম অলিন্দ খ) বাম নিলয় গ) ফুসফুসীয় শিরা ঘ) মহাধমনী
উত্তরঃ একটি মানব হৃদপিণ্ডের ছবিতে সাধারণত চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে: উপরে দুটি অলিন্দ (atrium) এবং নিচে দুটি নিলয় (ventricle)। হৃদপিণ্ডকে মাঝ বরাবর লম্বালম্বিভাবে একটি প্রাচীর দিয়ে ভাগ করা হয়, যা এটিকে বাম এবং ডান ভাগে বিভক্ত করে।
ক) বাম অলিন্দ (Left Atrium): এটি হৃদপিণ্ডের উপরের বাম দিকের প্রকোষ্ঠ। এই প্রকোষ্ঠে ফুসফুস থেকে বিশুদ্ধ রক্ত ফুসফুসীয় শিরা দিয়ে প্রবেশ করে।
খ) বাম নিলয় (Left Ventricle): এটি হৃদপিণ্ডের নিচের বাম দিকের প্রকোষ্ঠ এবং হৃদপিণ্ডের চারটি প্রকোষ্ঠের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। বাম অলিন্দ থেকে রক্ত এই নিলয়ে আসে এবং এখান থেকে মহাধমনীর মাধ্যমে বিশুদ্ধ রক্ত সারা দেহে পাম্প হয়।
গ) ফুসফুসীয় শিরা (Pulmonary Vein): এই শিরাগুলি ফুসফুস থেকে অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রক্ত বাম অলিন্দে নিয়ে আসে। সাধারণত, চারটি ফুসফুসীয় শিরা থাকে (প্রতি ফুসফুস থেকে দুটি)। আপনার ছবিতে এই শিরাগুলিকে বাম অলিন্দের সাথে সংযুক্ত দেখাতে হবে।
ঘ) মহাধমনী (Aorta): এটি মানবদেহের বৃহত্তম ধমনী। এটি বাম নিলয় থেকে উৎপন্ন হয়ে একটি বড় বাঁক নিয়ে শরীরের উপরের এবং নিচের অংশে বিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহ করে। আপনার ছবিতে মহাধমনীকে বাম নিলয় থেকে বেরিয়ে উপরের দিকে বাঁকানো অবস্থায় দেখাতে হবে।
2) দেহভর সূচক কাকে বলে? তোমার বন্ধুর দেহভর সূচক ২৮.৫ , তার শারীরিক অবস্থা কীরূপ বলে তোমার মনে হয়?
উত্তরঃ দেহভর সূচক (Body Mass Index - BMI) হলো একজন ব্যক্তির উচ্চতার সাপেক্ষে তার ওজনের একটি পরিমাপ। এটি কিলোগ্রাম (kg) এককে ওজন এবং মিটার (m) এককে উচ্চতার বর্গের অনুপাত দ্বারা গণনা করা হয়:
BMI= ওজন/ উচ্চতা ²
BMI স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি মূল্যায়নে একটি সহায়ক সূচক, যদিও এটি শরীরের চর্বি শতাংশ সরাসরি পরিমাপ করে না।
আপনার বন্ধুর শারীরিক অবস্থা:
আপনার বন্ধুর BMI 28.5। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মানদণ্ড অনুযায়ী, BMI-এর নিম্নলিখিত শ্রেণীবিভাগ রয়েছে:
* 18.5 এর কম: কম ওজন (Underweight)
* 18.5 থেকে 24.9: স্বাভাবিক ওজন (Normal Weight)
* 25.0 থেকে 29.9: অতিরিক্ত ওজন (Overweight)
* 30.0 বা তার বেশি: স্থূল (Obese)
এই মানদণ্ড অনুসারে, আপনার বন্ধুর BMI 28.5 "অতিরিক্ত ওজন (Overweight)" শ্রেণীতে পড়ে। এর মানে হলো তার ওজন তার উচ্চতার সাপেক্ষে কিছুটা বেশি। এই অবস্থায় হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে। তাকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে একজন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
3) রক্তে উপস্থিত বিভিন্ন রক্তকণিকা গুলোর কাজগুলো লেখো।
উত্তরঃ রক্তে প্রধানত তিন ধরনের রক্তকণিকা থাকে, যাদের প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে:
ক) লোহিত রক্তকণিকা (Red Blood Cells - RBCs / Erythrocytes):
এদের প্রধান কাজ হলো অক্সিজেন পরিবহন করা। লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামক একটি লোহাযুক্ত প্রোটিন থাকে, যা ফুসফুস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং তা শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে দেয়।
১) এরা কার্বন ডাই অক্সাইডের একটি অংশকেও ফুসফুসে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
২) এদের দ্বি-অবতল আকৃতি এবং নিউক্লিয়াসবিহীন গঠন তাদের অক্সিজেন পরিবহনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী করে তোলে।
খ) শ্বেত রক্তকণিকা (White Blood Cells - WBCs / Leukocytes):
১) এদের প্রধান কাজ হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ করা। শ্বেত রক্তকণিকা হলো দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সৈনিক।
২) এরা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণু ও পরজীবীগুলিকে চিহ্নিত করে এবং ধ্বংস করে।
৩) বিভিন্ন ধরণের শ্বেত রক্তকণিকা (যেমন নিউট্রোফিল, লিম্ফোসাইট, মনোসাইট, ইওসিনোফিল, বেসোফিল) সম্মিলিতভাবে কাজ করে শরীরের অনাক্রম্যতা (immunity) বজায় রাখে।
গ) অনুচক্রিকা (Platelets / Thrombocytes):
১) এদের প্রধান কাজ হলো রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা (Blood Clotting)। যখন রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন অনুচক্রিকাগুলো সেই স্থানে একত্রিত হয় এবং একটি প্লাগ তৈরি করে।
২) এরা রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে, যা রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে।
4) স্পর্শহীন বল কী? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ স্পর্শহীন বল হলো এমন এক প্রকার বল যা দুটি বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া করে যখন তারা একে অপরের সংস্পর্শে থাকে না, অর্থাৎ তাদের মধ্যে কোনো ভৌত স্পর্শ থাকে না। এই বল একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের মাধ্যমে কাজ করে।
উদাহরণসহ ব্যাখ্যা:
* মহাকর্ষ বল (Gravitational Force): এটি দুটি বস্তুর মধ্যে তাদের ভরের কারণে ক্রিয়া করে। উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবী সূর্যকে আকর্ষণ করে এবং চাঁদকে আকর্ষণ করে, যদিও তাদের মধ্যে সরাসরি কোনো স্পর্শ নেই। যখন আপনি একটি আপেল ছেড়ে দেন, তখন এটি পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের কারণে মাটিতে পড়ে। এটি সবচেয়ে পরিচিত স্পর্শহীন বল।
* চুম্বকীয় বল (Magnetic Force): এটি চুম্বক বা চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত বস্তুর মধ্যে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি চুম্বক লোহা বা নিকেল জাতীয় ধাতুকে আকর্ষণ করে, এমনকি যদি তাদের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব থাকে। দুটি চুম্বকের মেরু একে অপরের কাছাকাছি আনলে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ হয়, যা স্পর্শ ছাড়াই ঘটে।
* তড়িৎচুম্বকীয় বল (Electromagnetic Force): এটি চার্জযুক্ত কণার মধ্যে ক্রিয়া করে। যেমন, একটি চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর পর কাগজের ছোট টুকরোগুলোকে আকর্ষণ করতে পারে। এখানে চিরুনি এবং কাগজের মধ্যে কোনো স্পর্শ ছাড়াই বল কাজ করে। এই বল আলো, রেডিও তরঙ্গ এবং এক্স-রের মতো তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণের জন্যও দায়ী।
এই বলগুলো দূরত্বের সাথে তাদের শক্তি পরিবর্তন করে; সাধারণত, দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে এদের শক্তি কমে যায়।
5) খাদ্য শৃঙ্খল কী? একটি বনের খাদ্য শৃঙ্খল ছকের সাহায্যে দেখাও।
উত্তরঃ খাদ্য শৃঙ্খল হলো একটি বাস্তুতন্ত্রে শক্তি স্থানান্তরের একটি প্রক্রিয়া, যেখানে একটি জীব অন্য একটি জীবকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং এই প্রক্রিয়াটি পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে। সহজ কথায়, কে কাকে খায় তার একটি ধারাবাহিকতা হলো খাদ্য শৃঙ্খল। এটি দেখায় কিভাবে শক্তি উৎপাদক থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর খাদকদের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়।
একটি সাধারণ খাদ্য শৃঙ্খলে নিম্নলিখিত স্তরগুলি থাকে:
উৎপাদক (Producers): সাধারণত সবুজ উদ্ভিদ যারা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় নিজেদের খাদ্য তৈরি করে (যেমন ঘাস, গাছপালা)। এরা খাদ্য শৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করে।
* প্রাথমিক খাদক (Primary Consumers / Herbivores): যারা উৎপাদকদের খায় (যেমন হরিণ, খরগোশ, ফড়িং)।
* দ্বিতীয় শ্রেণীর খাদক (Secondary Consumers / Carnivores or Omnivores): যারা প্রাথমিক খাদকদের খায় (যেমন সাপ, শিয়াল)।
* তৃতীয় শ্রেণীর খাদক (Tertiary Consumers / Carnivores): যারা দ্বিতীয় শ্রেণীর খাদকদের খায় (যেমন বাজপাখি, বাঘ)।
* বিয়োজক (Decomposers): মৃত জীবদেহ ও বর্জ্য পদার্থ থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে এবং তাদের পচিয়ে পরিবেশে ফিরিয়ে দেয় (যেমন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক)। এরা খাদ্য শৃঙ্খলের প্রতিটি স্তরের সঙ্গেই সম্পর্কিত।
একটি বনের খাদ্য শৃঙ্খল ছকের সাহায্যে:
সূর্য (শক্তির মূল উৎস)
↓
[উৎপাদক] → ঘাস / ছোট গাছপালা (সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন করে)
↓
[প্রাথমিক খাদক] → হরিণ / খরগোশ / ফড়িং (ঘাস/গাছপালা খায়)
↓
[দ্বিতীয় শ্রেণীর খাদক] → শিয়াল / সাপ / ব্যাঙ (হরিণ/খরগোশ/ফড়িং খায়)
↓
[তৃতীয় শ্রেণীর খাদক] → বাঘ / বাজপাখি (শিয়াল/সাপ খায়)
↓
[বিয়োজক] → ব্যাকটেরিয়া / ছত্রাক (মৃত বাঘ/বাজপাখি বা অন্যান্য জীবের দেহাবশেষ পচিয়ে পুষ্টি পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়)
এই শৃঙ্খলটি দেখায় কিভাবে শক্তি সূর্য থেকে উৎপাদকের মাধ্যমে, তারপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন খাদক স্তরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং অবশেষে বিয়োজকদের দ্বারা পরিবেশে ফিরে আসে।