মুঘলরা তৈমুর লং এর বংশধর হিসেবে গর্ববোধ করত, এর বেশ কিছু কারণ ছিল:
* পিতা ও মাতার দিকের বংশধারা: মুঘল সম্রাটরা মূলত দুই মহান যোদ্ধাবংশের বংশধর ছিলেন। তাদের পিতার দিক থেকে তারা তৈমুর লং-এর বংশধর ছিলেন, যিনি ইরান, ইরাক এবং আধুনিক তুরস্কের শাসক ছিলেন। অন্যদিকে, তাদের মাতার দিক থেকে তারা চেঙ্গিস খান-এর বংশধর ছিলেন, যিনি মঙ্গোল উপজাতিদের শাসক ছিলেন এবং চীন ও মধ্য এশিয়ার বিশাল অংশে রাজত্ব করেছিলেন।
* তৈমুরের গৌরবময় অতীত: মুঘলরা তাদের তৈমুরীয় পূর্বপুরুষ নিয়ে গর্বিত ছিল কারণ তৈমুর লং ছিলেন একজন অপরাজেয় সেনাপতি এবং ঐতিহাসিকদের মতে ইতিহাসের অন্যতম সফল যোদ্ধা। তিনি ১৩৯৮ সালে দিল্লি জয় করে ভারতেও নিজের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করেছিলেন। তৈমুরের এই গৌরবময় বিজয়গাঁথা মুঘলদের জন্য এক ধরনের অনুপ্রেরণা ছিল।
* চেঙ্গিস খানের ভাবমূর্তি: যদিও মুঘলরা চেঙ্গিস খানের বংশধর ছিল, তবে তারা নিজেদের "মুঘল" বা "মঙ্গোল" বলতে পছন্দ করত না। এর কারণ ছিল চেঙ্গিস খানের নাম গণহত্যার সাথে জড়িত ছিল। চেঙ্গিস খান যেখানেই সাম্রাজ্য বিস্তার করেছেন, সেখানেই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। তাই, মুঘলরা নিজেদের তৈমুরীয় পরিচয়কে বেশি গুরুত্ব দিত, কারণ তৈমুরের ভাবমূর্তি চেঙ্গিস খানের তুলনায় কম নৃশংস ছিল এবং তার নাম ইতিহাসের পাতায় এক মহান বিজেতা হিসেবে পরিচিত ছিল।
* শিল্প ও সংস্কৃতিতে পৃষ্ঠপোষকতা: তৈমুরীয়রা শিল্প ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। মুঘলরাও তাদের এই ঐতিহ্যকে ধারণ করেছিল এবং তাদের সময়ে শিল্পকলা, স্থাপত্য, সাহিত্য ইত্যাদির ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। মুঘল সম্রাটরা তৈমুরের সাথে নিজেদের ছবি তৈরি করে তাদের বংশগত গর্বকে তুলে ধরতেন।
সংক্ষেপে, মুঘলরা তৈমুরের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব, তার সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি এবং তার কম নৃশংস ভাবমূর্তির কারণে তৈমুর লং এর বংশধর হিসেবে নিজেদেরকে গর্বিত মনে করত এবং নিজেদেরকে তার প্রকৃত উত্তরাধিকারী হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইত।
