পরমাণু
(১) পরমাণুর ভর ও আয়তন বলতে কি বোঝ?
* পরমাণুর ভর: একটি পরমাণুর ভর বলতে বোঝায় তার নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন এবং নিউট্রনের মোট ভর। ইলেকট্রনের ভর প্রোটন এবং নিউট্রনের তুলনায় খুবই নগণ্য হওয়ায়, পরমাণুর ভর গণনার সময় ইলেকট্রনের ভরকে সাধারণত উপেক্ষা করা হয়।
* পরমাণুর আয়তন: পরমাণুর আয়তন বলতে বোঝায় তার ইলেকট্রন মেঘের বিস্তার। পরমাণুর প্রায় সমগ্র আয়তন জুড়েই থাকে ইলেকট্রন মেঘ। নিউক্লিয়াস পরমাণুর কেন্দ্রে খুব সামান্য জায়গা দখল করে।
(২) পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে কি কি কণা থাকে?
পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে প্রধানত দুটি কণা থাকে:
* প্রোটন: ধনাত্মক আধানযুক্ত কণা।
* নিউট্রন: আধানহীন বা নিরপেক্ষ কণা।
(৩) রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের ত্রুটিগুলি লেখো।
রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের প্রধান ত্রুটিগুলি হল:
* ইলেকট্রনগুলি নিউক্লিয়াসের চারিদিকে ঘোরার সময় ক্রমাগত শক্তি বিকিরণ করে এবং ধীরে ধীরে নিউক্লিয়াসের দিকে সর্পিল পথে এগিয়ে যায়। ফলে পরমাণুর স্থায়িত্ব ব্যাখ্যা করা যায় না।
* পরমাণুর বর্ণালী সম্পর্কে কোনো ধারণা দেয় না।
(৪) আইসোটোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
* আইসোটোপ: একই মৌলের বিভিন্ন পরমাণু যাদের প্রোটন সংখ্যা একই কিন্তু নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন, তাদের আইসোটোপ বলে।
* উদাহরণ: কার্বনের তিনটি আইসোটোপ হল কার্বন-১২ (¹²C), কার্বন-১৩ (¹³C) এবং কার্বন-১৪ (¹⁴C)।
(৫) আইসোবার ও আইসোটোন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
* আইসোবার: বিভিন্ন মৌলের যেসব পরমাণুর ভরসংখ্যা একই কিন্তু প্রোটন সংখ্যা ভিন্ন, তাদের আইসোবার বলে।
* উদাহরণ: আর্গন-৪০ (⁴⁰Ar) এবং ক্যালসিয়াম-৪০ (⁴⁰Ca) আইসোবার।
* আইসোটোন: বিভিন্ন মৌলের যেসব পরমাণুর নিউট্রন সংখ্যা একই কিন্তু প্রোটন সংখ্যা ভিন্ন, তাদের আইসোটোন বলে।
* উদাহরণ: কার্বন-১৪ (¹⁴C) এবং নাইট্রোজেন-১৫ (¹⁵N) আইসোটোন।
(৬) কক্ষপথ ও কক্ষকের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
* কক্ষপথ: পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারিদিকে ইলেকট্রনগুলি যে নির্দিষ্ট বৃত্তাকার পথে ঘোরে, তাকে কক্ষপথ বলে।
* কক্ষক: নিউক্লিয়াসের চারিদিকে ত্রিমাত্রিক অঞ্চলে ইলেকট্রন থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেই অঞ্চলকে কক্ষক বলে।
(৭) আফবাউ নীতিটি লেখো।
আফবাউ নীতি অনুসারে, পরমাণুর ইলেকট্রনগুলি প্রথমে সর্বনিম্ন শক্তিস্তরের কক্ষকগুলিতে প্রবেশ করে এবং তারপর ক্রমান্বয়ে উচ্চ শক্তিস্তরের কক্ষকগুলিতে প্রবেশ করে।
(৮) হুন্ডের সূত্রটি লেখো।
হুন্ডের সূত্র অনুসারে, সমশক্তির একাধিক কক্ষকে ইলেকট্রন প্রবেশের সময় প্রথমে প্রতিটি কক্ষকে একটি করে ইলেকট্রন প্রবেশ করে এবং তারপর ইলেকট্রন জোড় তৈরি হয়।
(৯) পাউলির অপবর্জন নীতিটি লেখো।
পাউলির অপবর্জন নীতি অনুসারে, কোনো পরমাণুর দুটি ইলেকট্রনের চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার মান কখনোই একই হতে পারে না।
(১০) অক্সিজেন অণুর গঠন লেখো।
অক্সিজেন অণুর (O₂) দুটি অক্সিজেন পরমাণু সমযোজী দ্বি-বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে।
(১১) Zn, H, H₂, Cl₂ এর মধ্যে কোনটি দ্বিপরমাণুক?
H₂, Cl₂ দ্বিপরমাণুক।
(১২) হাইড্রোজেন বন্ধন কাকে বলে?
যখন কোনো হাইড্রোজেন পরমাণু ফ্লুওরিন, অক্সিজেন বা নাইট্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে, তখন ওই হাইড্রোজেন পরমাণু অন্য কোনো ফ্লুওরিন, অক্সিজেন বা নাইট্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে যে দুর্বল বন্ধন তৈরি করে, তাকে হাইড্রোজেন বন্ধন বলে।
(১৩) সমযোজী বন্ধন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
* সমযোজী বন্ধন: দুটি পরমাণু যখন তাদের ইলেকট্রন শেয়ার করে বন্ধন তৈরি করে, তখন তাকে সমযোজী বন্ধন বলে।
* উদাহরণ: হাইড্রোজেন অণু (H₂), জল (H₂O), মিথেন (CH₄)।
(১৪) আয়নীয় যৌগ ও সমযোজী যৌগের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
| আয়নীয় যৌগ | সমযোজী যৌগ |
|---|---|
| ইলেকট্রন স্থানান্তরের মাধ্যমে গঠিত হয়। | ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে গঠিত হয়। |
| সাধারণত কঠিন অবস্থায় থাকে। | কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় অবস্থায় থাকতে পারে। |
| গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বেশি। | গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক কম। |
| সাধারণত জলে দ্রাব্য। | সাধারণত জলে অদ্রাব্য। |
(১৫) অ্যামোনিয়া অণুর গঠন লেখো।
অ্যামোনিয়া অণুর (NH₃) একটি নাইট্রোজেন পরমাণু তিনটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে তিনটি সমযোজী এক-বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে।
(১৬) যোজ্যতা ও যোজক ইলেকট্রন বলতে কি বোঝ?
* যোজ্যতা: কোনো মৌলের পরমাণু যতগুলি হাইড্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বা যতগুলি ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জন করতে পারে, সেই সংখ্যাকে তার যোজ্যতা বলে।
* যোজক ইলেকট্রন: কোনো পরমাণুর সর্বশেষ কক্ষের ইলেকট্রনগুলিকে যোজক ইলেকট্রন বলে।
(১৭) অষ্টক সূত্রটি লেখো।
অষ্টক সূত্র অনুসারে, পরমাণুগুলি তাদের সর্বশেষ কক্ষে আটটি ইলেকট্রন অর্জনের চেষ্টা করে, যাতে তারা স্থিতিশীল হতে পারে।
(১৮) ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন বলতে কি বোঝ?
* ক্যাটায়ন: ধনাত্মক আধানযুক্ত আয়নকে ক্যাটায়ন বলে।
* অ্যানায়ন: ঋণাত্মক আধানযুক্ত আয়নকে অ্যানায়ন বলে।
(১৯) পারমাণবিক সংখ্যা ও ভরসংখ্যা বলতে কি বোঝ?
* পারমাণবিক সংখ্যা: কোনো মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটনের সংখ্যাকে পারমাণবিক সংখ্যা বলে।
* ভরসংখ্যা: কোনো মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন এবং নিউট্রনের মোট সংখ্যাকে ভরসংখ্যা বলে।
(২০) নিউক্লিয়ন কাকে বলে?
পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন এবং নিউট্রনকে একত্রে নিউক্লিয়ন বলে।
Declaration: Use Numeric UI font to get the Bengali font perfectly . Select the text and touch the 'Read Aloud ' option and set the speed at '3' to listen the whole text as one is telling you story and get better understanding.
(বাংলা ফন্ট নিখুঁতভাবে পেতে Numeric UI ফন্ট ব্যবহার করুন। লেখাটি নির্বাচন করুন এবং 'Read Aloud' অপশনটি স্পর্শ করুন এবং গল্প বলার মতো করে পুরো লেখাটি শুনতে এবং ভালোভাবে বুঝতে স্পীড '3'-এ সেট করুন।)
